ব্রিকলেন নিউজঃ
‘একাত্তরে হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী পৃথিবীর নিকৃষ্টতম গণহত্যা চালিয়েছে’
একাত্তরে বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থার দলনেতা, বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ‘মুক্তির গান’ খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেনু বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বাংগালীরা ৩০ লক্ষ প্রাণ দিয়েছে এবং পাকিস্তানী হানাদাররা দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত হরণ করেছে। স্বাধীনতার জন্য এত বেশী মূল্য দেয়ার ঘটনা ভারতীয় উপমহাদেশেতো নয়ই, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল।
তিনি আরো বলেন, যুদ্ধের ময়দানে বা সম্মুখ সমরে নয়, এই ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে সশস্ত্র হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসর কর্তৃক নির্বিচারে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর গুলি বেয়োনেট চালানোর ফলে। আমি একাত্তরের পঁচিশে মার্চ ঢাকায় ছিলাম, অস্ত্রধারী পাকসেনা কর্তৃক নিরস্ত্র মানুষের উপর সশস্ত্র আক্রমণ ও হত্যা নিজ চোখে দেখেছি। বস্তুত একাত্তরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত হয়েছে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম গণহত্যা।
মাহমুদুর রহমান বেনু ১৯ ডিসেম্বর রবিবারে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে আয়োজিত বাংলাদেশের পঞ্চাশতম বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও শিক্ষক মাহমুদুর রহমান বেনু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরীতে বংগবন্ধুর ছয়দফার পাশাপাশি ছাত্র সমাজের ১১ দফা আন্দোলনের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ আন্দোলনে নীজের সংশ্লিষ্টতার স্মৃতিচারণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তাঁর দলের শিল্পীরা শরনার্থী শিবিরসমূহে গান করার পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভারতীয় জনগণের সহানুভূতি আদায়ের লক্ষ্যে ভারতের বিভিন্ন শহরে যেমন গেয়েছেন, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য দেশের ভিতরে রনাঙ্গণসমূহে ঘুরে ঘুরেও গান গেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে অন্যতম বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তণ ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান বলেন, যদিও বাংগালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংগঠন ও জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ামক ভূমিকা পালন করে, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কমসংখ্যক ছাত্র শিক্ষক সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। যুদ্ধের নয় মাস বিশ্ববিদ্যালয় খোলা ছিল, পরীক্ষাসমূহ যথারীতি অনুষ্ঠিত হয়। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন মুক্তিযুদ্ধ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এলে তিনি প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে অটো প্রমোশন পান এবং দেখতে পান বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সহপাঠী ও পরিচিত ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা মাত্র হাতেগোনা কয়েকজন। তখনকার ছাত্র শিক্ষকদের প্রায় সবাই স্বাধীনতার সমর্থক হওয়া স্বত্তেও মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নেবার কারণ ছিল তারা ছিলেন মধ্য ও উচ্চবিত্ত শ্রেণী থেকে আগত যাদের পক্ষে লেখাপড়া এবং চাকুরী ছেড়ে যুদ্ধে যাওয়া সহজ ছিলো না। আবু মুসা হাসান বলেন, অধিকাংশ গরীব কৃষকের সন্তানরাই মুক্তিযুদ্ধ করেছে।
সংগঠনের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা, ডাকসুর সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতানের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বারিস্টার মাহারুন আহাম্মেদ মালার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি প্রশান্ত পুরকায়স্থ বিইএম, সহসভাপতি মেসবাহউদ্দিন ইকো, সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ মোহাম্মদ আব্দুর রাকিব এবং মারুফ চৌধুরী।
দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক সম্পাদক রীপা রকিবের পরিচালনায় এবং সহসভাপতি নিলুফা হাসান ও বেলাল রশীদ চৌধুরীর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধকালীন গান পরিবেশন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাহমুদর রহমান বেনু, বিলেতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী গৌরী চৌধুরী এবং ইয়াসমিন খায়ের শেলী। এছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন সংগঠনের সদস্য এবং সন্তানদের নিয়ে গঠিত এ্যালামনাই সাংস্কৃতিক দল। এ পর্বে গান পরিবেশন করেন এ্যালামনাই সদস্য রীপা সুলতানা রাকীব, নাদিয়া লোদী ওয়াহাব, মোস্তফা কামাল মিলন, ব্যারিস্টার কেজেবি কনক, ওমল পোদ্দার ও সৈয়দ তারেক এবং এ্যালাইলাই সন্তান প্রীয়ম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন এ্যালাইনাই সদস্য ব্যারিস্টার কামরুল হাসান, ব্যারিস্টার মিজানুর রহমান, মেসবাহ উদ্দিন ইকো, এরিনা সিদ্দীকি সুপ্রভা, সৈয়দ তারিকুল ইসলাম, সাদিয়া গাজী অন্তরা এবং এ্যালাইনাই সন্তান প্রিয়ম, আলমীর ও রায়ীদ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।