উড়াল পংখীর উড়ে যাওয়া..

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

জুয়েল রাজঃ

দেখতে দেখতে নয় বছর কেটে  গেলো, গল্পের যাদুকর  হুমায়ুন আহমেদের তিরোধানের । না ফেরার দেশে মেঘের উপর বাসা বানিয়ে, কেমন আছেন তিনি?  বলেছিলেন ও আমার উড়াল পঙ্খীরে যা যা তুই উড়াল দিয়া যা / আমি থাকব মাটির ভরে,আমার চোখে বৃষ্টি পড়ে /  তোর হইবে মেঘের উপর বাসা / যা যা তুই উড়াল দিয়া যা।

একটা প্রজন্ম কে  মন্ত্রমুগ্ধের মতো করে টেনে নিয়ে যাওয়া শুধু মাত্র তার পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল। তিনি কতটা জ্ঞানী ছিলেন আমি জানিনা তবে কতো টা লেখক ছিলেন  সেটা বলা সম্ভব। তার জন্মদিনে, মৃত্যুদিনে ফেইস বুক জুড়ে এই প্রজন্মের তরুন দের মন্তব্য গুলো আমাকে আরও গভীর ভাবে জানতে দিয়েছে।  হুমায়ুন আহামেদের মৃত্যুর  পরপর সেদিন লিখা কিছু ফেইসবুক স্ট্যাটাস গুলোর  কয়েকটা অবিকল তোলে দিলাম ………

এস এ কবির রনি লিখেছিলেন ‘’ যদি সাহিত্যর কোন ভাল কিছু পড়তে পেরেছি তবে বলব হুমায়ুন আমাকে পড়তে শিখিয়েছে। হুমায়ূন না পড়লে আমি কোনদিনই বাংলা সাহিত্যর কঠিন কঠিন লেখাগুলো পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতাম না। সমূদ্রের গভীরে যেতে সাহায্যকারী আমাদের সবারই হুমায়ূন।“পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের পায়ের শব্দ। নোমান কি আসছে? সে যদি আসে তাহলে তাকে একটা কথা বলে যেতে চাই। কথাগুলো বলার মত শক্তি আমার থাকবে তো? আমি বলব, এই দেখ আমি মরে যাচ্ছি। যে মানুষ মরে যাচ্ছে তার উপর কোন রাগ ঘেন্না থাকা উচিৎ নয়।” নবনীর শেষ কথাগুলো কি মনে আছে হুমায়ুনের। আমাদের এই মানুষটির প্রতি কোন রাগ, ঘৃণা কিছুই আর নেই সেকি হুমায়ুন না ফেরার দেশ থেকে তার হাজার হাজার সমালোচনাকারীর আক্ষেপ থেকে, অশ্রু বাষ্প দেখে বুঝতে পারছে।

দলছুট শুভ লিখেছিলেন

হিমুর নীল পদ্ম কাকে দিল ?

রূপার অসমাপ্ত প্রেম অসমাপ্ত থেকেই কি সমাপ্ত হবে ?

পা ভাঙ্গা কুকুর কি আর জোঁছনায় ভিজবে না ??

শুভ্রের সমস্যার সমাধান ???

 

আমার মত হিমুদের কি হবে ???

‘’প্রথম আলো পত্রিকার সিলেটের ব্যুরো চীফ লিখেছিলেন আজ কি চাদনি পসর রাইত?… তবে কেন অবেলায় চলে যাওয়া!’’

ব্যাংকার মিলি লিখেছিলেন

প্রতি পূর্ণিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই…

গৃহত্যাগী হওয়ার মত জোছনা কি উঠেছে????

আমি সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী জোছনার জন্য বসে আছি……

এরকম হাজার ও মন্তব্য আজ তার মৃত্যুতে, কতো টা লেখক তিনি মানুষের চেতনায় কিভাবে বিরাজমান সেটা বুঝতে পেরেছি আজ।

রয়েল পাল নামে এক তরুণ লিখেছিলেন

হুমায়ূন!তোমার মৃত্যু হয়নি,এক টুকরো বাংলাদেশের মৃত্যু হয়েছে!!!……………………………বর্তমান সময়ে আমি যদি আমাকে দিয়ে বা আমার চার পাশের বন্ধু পরিচিত জনদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলি সেটা বাতুলতা হবে না আমাদের কে বই এর দেশে যে মানুষটা নিয়ে গেছেন তিনি হুমায়ুন আহমেদ। এমন একজন কে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে যে হুমায়ুন আহমেদ এর বই পড়েনি। হিমু , মিসির আলী তো বাংলা সাহিত্যের মাইল ফলক হয়ে রয়েছে। এর বাইরে রুপা, নিতু, মিরা, তিথি, প্র্যতেক টা চরিত্র আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের একেক টি তরুণীকে উপস্থাপন করে।  ছোট বেলার বাকের ভাই ” মাইরের মধ্যে ভাইটামিন আছে ” সেই বহুল প্রচলিত সংলাপ ছিল মুখে মুখে  , কিংবা তার ও আগে  আলবদর রাজাকার এ দেশে প্রায় নিষিদ্ধ্ব  শব্দ ছিল সেই সময়  বাংলাদেশে যিনি সাহস করে প্রথম  তার নাটকে পাখির মুখে বলিয়েছেন বলতে তুই রাজাকার জাতীয় সংলাপ তিনি আমাদের হুমায়ুন আহমেদ। তার জাদুর স্পর্শে কেমন ঝলমল করে উঠেছে আমাদের বাংলা সাহিত্য, গল্প উপন্যাস, অথবা বাংলা সিনেমা, নাটক নিয়ে নতুন করে বলার মতো কি আর বাকি আছে। সংগীতে তিনি বিশেষ একটা ধরন উপহার দিয়েছেন যেমন একটা ছিল সোনার কন্যা। অথবা আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা বেড়ার ফাঁকে অবাক জোসনা  ঢুইকা  পরে   হাত বাড়াইয়া ঢাকে। চাঁদনী পসরে কে আমারে স্মরণ করে / কে আইসা দাড়াইছে গো আমার দুয়ারে / তাহারে  চিনিনা কিন্তু সে আমারে চিনে।   এ ধরনের অসংখ্য গান তিনি রচনা করেছেন । তার নাটকে ,সিনেমায়, গানে,  আবহমান বাংলাকে,  বাংলার লোক সাহিত্য কে এতো সুন্দর ভাবে তোলে এনে নতুন প্রজন্মের কাছে  উপস্থাপন  করেছেন যে তার শত্রু ও সেটা স্বীকার করবে। বলা হয় বাংলা সাহিত্য শরৎচন্দ্রের পরে এতো জনপ্রিয়তা আর কোন লেখক পান নি যতো টা পেয়েছিলেন হুমায়ুন আহমেদ। প্রথম আলো পত্রিকায় শ্রদ্ধেয় আনিসুল হক লিখেছিলেন  ” আজকের ছেলেমেয়েরা বৃষ্টিতে ভিজতে চায়, জোছনা দেখতে চায়, সে তো তাঁর কাছ থেকে শেখা। তারা ‘হিমু’ হতে চায়, ‘মিসির আলী’র মতো করে যুক্তি খোঁজে” এক বিন্দু মিথ্যা নেই তার এই কথায়। আমাদের ভাবনার জগতকে এতো বেশী আলোড়িত করেছিলেন যে বৃষ্টি, জোছনা, কদম ফুল, এর মোহ কিন্তু তার কাছ থেকেই পাওয়া।

হুমায়ূন আহমেদের জন্ম নেত্রকোনার কুতুবপুরে ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কুতুবপুরে জন্ম গ্রহন করেন হুমায়ুন আহমেদ।  বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। মায়ের নাম আয়েশা ফয়েজ। তাঁরা তিন ভাই ও দুই বোন। অন্য দুই ভাই হলেন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে পড়ালেখা শেষ করে ওই বিভাগেই প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।১৯৭২সালে নন্দিত নরকে দিয়ে লেখার জগতে তার পথচলা একে একে দুই শতাধিক উপন্যাসের রচিয়তা তিনি।  তার সাড়া জাগানো উপন্যাস গুলোর মাঝে শঙ্খনীল কারাগার, রজনী, এপিটাফ, পাখি আমার একলা পাখি, ফেরা, নিষাদ, দারুচিনি দ্বীপ, নির্বাসন, অমানুষ, রূপালী দ্বীপ, শুভ্র, দূরে কোথাও, মন্দ্রসপ্তক, বাদশাহ নামদার, সাজঘর, বাসর,গৌরিপুর জংশন। জোছনা জননীর গল্প, ইত্যাদি। সর্ব শেষ তার অপ্রকাশিত উপন্যাস দেয়াল নিয়ে  বিতর্কের মাঝে পরেছিলেন এবং সেই বিষয় গুলো সংশোধনের জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন । আমরা মুক্তিযোদ্ধ্ব পরবর্তী সময়ের আরও একটি ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস হয়তো পেতাম বঙ্গবন্ধু কে তিনি কি ভাবে উপস্থাপন করেছিলেন আর জানা হল না।

২০১২ সালের ১৯ জুলাই  বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২০ মিনিটে  ক্যান্সার এর সাথে সংগ্রাম করে  চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি নিউইয়র্কের বেলভ্যু হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মাত্র ৬৪ বছর বয়সে তিনি উড়াল দেন না ফেরার দেশে। বলেছিলেন ‘পৃথিবীতে বেঁচে থাকার চেয়ে বড় আর কিছু নেই’। সত্যি তাই এর চেয়ে বড় কোন সত্যি নেই।  সব খেলা থামিয়ে সব রঙ মুছে দিয়ে বাংলা সাহিত্যের মহানায়কের এই মহাপ্রয়ান । আর কত যুগ পরে ফিরে আসবেন একজন হুমায়ুন আহমেদ । তোমার গানে তোমাকে বলি,  যদি মন কাঁদে তুমি  চলে এসো,চলে এসো, এক বরষায় / এসো ঝরঝর বৃষ্টিতে / জল ভরা দৃষ্টিতে/ এসো কোমল ও শ্যমাল ও ছায়।  আমরা কদম গুচ্ছ হাতে  নিয়ে তোমার জন্য তৈরি  থাকব। তোমার প্রার্থনা ছিল কোন চাঁদনী পসর রাত্রে যেন তোমার মরন হয় বলেছিলে ” ও কারিগর, দয়ার সাগর, ওগো দয়াময় চাঁদনি পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয় / চাঁদনি পসর চাঁদনি পসর, আহারে আলো কে বেসেছে কে বেসেছে তাহারে ভালো / কে দিয়েছে নিশি রাইতে দুধের চাদর গায়ে / কে খেলেছে চন্দ্র খেলা ধবল ছায়ায় – এখন খেলা থেমে গেছে মুছে গেছে রঙ/ অনেক দূরে বাজছে ঘন্টা ঢং ঢং / এখন যাবো অচিন দেশে অচিন কোন গাঁয়  চন্দ্র কারিগরের কাছে ধবল পংখী নায়” অপূর্ণতা ও জীবনের আরেক বড় সত্য । তাও তুমি  জেনে গেলে , কিন্তু রয়ে গেলে কোটি প্রাণে আস্ত পূর্ণিমা চাঁদ হয়ে, আর সেই জোছনায় অবগাহন করবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।

( হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিনে  তাঁকে নিয়ে শোকগাঁথা দিয়ে তাঁকে স্মরণ। পুনঃমুদ্রিত)

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০