হরমুজ আলী
মাননীয় তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদকে আমি চিনিনা। আগে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। খবর নিয়ে জানলাম, তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিরও কেন্দ্রীয় সদস্য। তিনি স্বাচিপ এবং বিএমএ এরও আজীবন সদস্য। বুঝলাম ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ কিংবা বাহাত্তরের সংবিধান প্রশ্নে তাঁর আদর্শিক অবস্থানের কারণ।
মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানকে আমি চিনি। তিনি আমার সংসদীয় আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এবং সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। সাধারণত রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলেন না, যখন বলেন তখন চমৎকার বলেন।
এবার আসি মূল কথায়। যেদিন আওয়ামী মুসলিম লীগের গতর থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটা ঝেড়ে ফেলে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেদিনই ঠিক হয়ে গেছে আমাদের আগামীর যাত্রাপথ। আমরা শিক্ষা আন্দোলন করেছি সাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে। আমরা স্বাধিকারের সংগ্রাম করেছি – সকল বাঙালির জন্য। আমাদের যুদ্ধ ছিলো পাকিস্তানি তথাকথিত ‘মুসলিম’ জাতীয়তার বিরুদ্ধে, যা বিভাজিত করে রেখেছিলো আমাদের চিরায়ত সংস্কৃতিকে ধারণ করে বেড়ে উঠা বাঙালি জাতীয়তাবোধকে। এই যুদ্ধজয়ের মূল হাতিয়ার হিসেবে বঙ্গবন্ধু বেচে নিয়েছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদকে, যা এই ভূখণ্ডের সকল মানুষকে এক সুতায় গেঁথেছিল। ইস্পাত-দৃঢ় প্রত্যয়ে সেদিন পুরো জাতি এক কাতারে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি বন্দুকের বিরুদ্ধে। আমরা সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানের কবর রচনা করে প্রতিষ্ঠা করেছিলাম সকল মত এবং পথের মানুষের জন্য এক অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যে কী, তা আমাদের অঞ্চলে বঙ্গবন্ধু থেকে ভালো করে কোনো নেতা অনুধাবন করেছেন বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়না। তাঁর নিজের একটা উদ্ধৃতি দেই – “রাজনীতিতে যারা সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি করে , যারা সাম্প্রদায়িক, তারা হীন, নীচ, তাদের অন্তর ছোট। যে মানুষকে ভালোবাসে, সে কোনোদিন সাম্প্রদায়িক হতে পারে না। আপনারা যারা এখানে মুসলমান আছেন তারা জানেন যে, খোদা যিনি আছেন, তিনি রাব্বুল আলামিন, রাব্বুল মুসলেমিন নন। হিন্দু হোক, খৃষ্টান হোক, মুসলমান হোক, বৌদ্ধ হোক, সমস্ত মানুষ তার কাছে সমান। সেজন্যই এক মুখে সোস্যালিজম ও প্রগতির কথা আরেকমুখে সাম্প্রদায়িকতা চলতে পারে না। সমাজতন্ত্র, প্রগতি আর সাম্প্রদায়িকতা পাশাপাশি চলতে পারে না।” (১৮ জানুয়ারি, ১৯৭৪ এ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষনের অংশ)
এ ব্যাপারে ১৯৭২ সালের ১৯ নভেম্বর কলকাতার দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর একটি বক্তব্য খুবই প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো – “স্বাধীন বাংলাদেশে সেক্যুলার বাঙালি জাতির অস্তিত্বের রক্ষাকারী হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। আমি এই ধর্মনিরপেক্ষতার চারা বাংলাদেশের মাটিতে পুঁতে গেলাম। যদি কেউ এ চারা উৎপাটন করে, তা হলে বাঙালি জাতির স্বাধীন অস্তিত্বই সে বিপন্ন করবে।”
এখন আমরা যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি, তাদের এই কথাটি বুঝতে এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো যে খুনী জিয়াউর রহমান কার স্বার্থে এবং কোন আদর্শের বিরোধিতা করতে গিয়ে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ জুড়ে দিয়েছিল কিংবা পরবর্তীতে তারই বশংবদ স্বৈরাচার এরশাদ আরো একধাপ এগিয়ে কেনো ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংবিধানে সংযোজন করেছিলো!
সুতরাং মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ কিংবা মাননীয় মন্ত্রী এম এ মান্নান যদি তাদের মন্ত্রণালয় দেখভাল করতে সক্ষম না হন তাহলে দলের সচেতন কর্মী হিসেবে আপনি তাঁদের পদত্যাগ চাইতেই পারেন কিন্তু যে আদর্শ জাতিরজনক নির্দিষ্ট করে গেছেন এবং আজকের আওয়ামী লীগও সেই একই আদর্শ ধারণ করে চলছে, সেখানে বেতালে লাফালাফি করে জামাত-বিএনপির হাতে যে ইস্যু তুলে দিচ্ছেন তা-কি একবারও ভেবে দেখেছেন! আমাদের শুভ বুদ্ধির যেনো উদয় হয়।
লেখকঃ সহ সভাপতি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ