তবু আশা বেঁধে রাখি… 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

জুয়েল রাজ

সব বাঁধা বিপত্তি,  ষড়যন্ত্র,  দেশি বিদেশী নানামুখী  বিপত্তি সব মোকাবেলা করে, বাংলাদেশ কে এক অনন্য উচ্চতায় যিনি নিয়ে গেছেন, তিনি শেখ হাসিনা। আমাদের সৌভাগ্য  বিজয়ের ৫০ বছরের এই শুভক্ষণে,  বদলে যাওয়া বাংলাদেশের প্রত্যক্ষদর্শী  হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি আমাদের এই প্রজন্ম। সব প্রাপ্তির ও কিছুপ্রাপ্তি  থাকে,  সব সুখের  গভীরে কিছু বেদনা থাকে। বাংলাদেশের এই প্রাপ্তির, সব অর্জনের মূল স্তম্ভ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের স্বাধীনতা। আর বেদনার অংশ বাংলাদেশের ধর্মীয়  সংখ্যালঘু  সম্প্রদায়।
জাতির পিতার আজীবন সংগ্রাম, নির্মম দীর্ঘ কারাবাস,বারবার ফাঁসির আদেশ, সব জয় করে জন্ম দিয়েছেন বাংলাদেশ নামের ভুখন্ডটি।  কিন্ত কি দূর্ভাগ্য   আমাদের পঁচাত্তরের ঘোর  অমানিশা  সব অন্ধকারে ডুবে যায়।
 বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল  প্রতীক্ষায় ছিল।  আলো হাতে  কেউ আসবে। বঙ্গবন্ধুর  বাংলাদেশে কেউ পথ দেখাবে।  সেই আলো হাতে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু  কন্যাই ফিরে আসলেন বাংলাদেশে। সূচিত হলো এক নতুন যুগের।১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ধর্মীয় সংখ্যালঘু  মানুষ স্বপ্ন দেখে,  এইবার বঙ্গবন্ধুর  সোনার বাংলায় তাঁরা মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে।বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষেরা  ১৯৯২ সালে, ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙার প্রতিশোধের নির্মম ক্ষত ঘুচিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়।
কিন্তু ২০০১ সালের বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর যে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায় তার হিসাব নিকাশ আমাদের চেয়ে আপনার কাছে অনেক বেশী জমা আছে।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু  নির্যাতনের ঘটনা নতুন কিছু নয়৷ আমরা যতো অসাম্প্রদায়িকতার গান গাই না কেন। বাস্তবতা একেবারেই ভীন্ন। এবং অবাক করার বিষয়,  সেই সত্যটা আমরা স্বীকার করতে চাইনা। অস্বীকার করে করে  সেই অপরাধকে হালকা করে দেই।
 বাস্তবতা তো  আমরা জানি। ৭৫ পরবর্তী  শাসকগোষ্ঠী  উদ্দেশ্যমূলক  ভাবে এই পরিস্থিতি  তৈরী করেছে। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে। ধীরে ধীরে কয়েকটা প্রজন্মকে তারা পাকিস্তানি  ভাবধারায় তৈরী করেছে।   কিন্ত এখন যখন সময়, সুযোগ সবই আছে  থেকে উত্তরণের কোন চেষ্টা করা হচ্ছেনা। বরং আরো বেশী করে সেই পথেই হেটে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে হিন্দুদের পরিবারে রবীন্দ্রনাথ নজরুল যেমন অনানুষ্ঠানিক ভাবে পূজিত হন,  চর্চিত হন ঠিক ততটাই  হন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু  এবং নৌকার  বোঝা বয়ে চলছে  অর্ধশতাব্দি ধরে। বঙ্গবন্ধু  যেভাবে তাদের বিশ্বাসের জায়গায় ছিলেন,  সেই জায়গায় এখন শেখ হাসিনা।
এতো নির্যাতনের পরে ও তারা বিশ্বাস করে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। শেখ হাসিনা সব ঠিক করে দিবেন। শেখ হাসিনা হয়তো এসব জানেন না,   কিংবা তাঁর কাছে প্রকৃত সত্যটা পৌঁছায় না।  যিনি জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের  বিচার সম্পন্ন  করতে পারেন, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধীদের বিচার সম্পন্ন করতে পারেন  তিনি নিশ্চয় সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীদের  চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি  দাঁড় করাতে পারেন। এই দেশে তাদের সুদিন ফিরে আসবে। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক একটা বাংলাদেশ তারা পাবেন।
যে মানুষগুলো ৭১ এ ফিরে এসেছে, পুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়া,  বঙ্গবন্ধুর  সোনার বাংলায়, ৭৫ এর নৃশংসতার প্রতিবাদ করেছে মাটি কামড়ে ধরে। ১৯৯২ এর  সাম্প্রদায়িক নির্যাতনে টলাতে পারে নি। সর্বশেষ  ২০০১ সালের  ভয়াবহ নির্যাতন  নিপীড়ন  লুটপাট  ধর্ষণে ও ভিটে ছাড়া হয়নি। কারণ তার বিশ্বাস করে তাদের মাথার উপর শেখ হাসিনা আছেন তিনি সব  একদিন ঠিক করে দিবেন।  কিন্ত কি দুর্ভাগ্য তাদের,  সেই আশা দিনদিন শুধু দূরাশায় পরিণত হয়। সংখ্যালঘু মানুষ গুলোর বিশ্বাসের ভূমি ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়।  রামু, নাসির নগর, শাল্লা বিচ্ছিন্ন ঘটনা  বলে মন কে বুঝায়। কিন্ত সর্বশেষ এবারের দুর্গাপূজায় যা ঘটল, তার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে  যাওয়ার ও অবকাশ নেই। কিন্ত কি অদ্ভুত ভাবে আপনার সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী অবলীলায় অস্বীকার করে বসলেন।  বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন এর “আল্লার মাল আল্লায় নিয়ে গেছে” বক্তব্যের মত বললেন,বাংলাদেশে কোথাও মন্দির ভাংচুর হয়নি৷ কেউ মারা যায়নি।  সরকার কে বিব্রত করতে এইসব ঘটনা ঘটেছে। মন্ত্রণালয়ের  পক্ষ থেকে বিশাল এক বিবৃতি দেয়া হয়েছে। কোথাও কেউ মারা যায় নি,  কোন মন্দির ভাংচুর হয়নি বলে।
আমাদের মত কিছু মানু্ষ,  যখন ঢাল তলোয়ার হীন নিধিরাম সর্দারের মতো গলা ফাটাই। তাদের গলা ও বন্ধ হয়ে আসে। এর কোন উত্তর দিতে পারি না। এই বক্তব্যে  একটি  শুভংকরের ফাঁকি  হয়তো আছে।  পররাষ্ট্রমন্ত্রী   হয়ত বলবেন,  স্থায়ী মন্দির তো ভাঙচুর হয়নি। যা হয়েছে অস্থায়ী পূজা মন্ডপ। বিশ্বাস করবেন কী না জানি না। প্রতিটা সংখ্যালঘু পরিবার এখন তার একটা সন্তান হইলে ও দেশের বাইরে পাঠাতে চায়। ইউরোপে থাকার সুবাদে প্রতিদিন এমন দুই চারটা ফোন ধরতে হয়। তারা হয়তো ধরে নিয়েছে বাংলাদেশ আর তাদের জন্য নয়।
তাদের সবচেয়ে দুঃখ, ৭১,৭৫, ৯২ কিংবা ২০০১ নয় এইসব নিয়তী হিসাবেই স্বীকার করে নিয়েছে। তাদের দুঃখ, যে আওয়ামী লীগ তাদের কপালে সিদুঁরের ফোটার মতো জ্বলজ্বল করে,  যার জন্য বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক  দল আর সংখ্যালঘুদের  দিকে ফিরে ও তাকায় না। কারণ তারা জানে সংখ্যালঘুরা  হাজার হলে ও এইখান থেকে ফিরে আসবে না। হিন্দু নারী রা যেমন একবার স্বামীর নামে কপালে সিঁদুর পরলে বিধবা হওয়ার পরই সেই সিঁদুর  মুছে। আওয়ামী লীগ  তাদের জন্য সেই সিঁদুর।  মৃত্যু ছাড়া কিংবা দেশান্তরি  ছাড়া সেই সিঁদুর আর ঘুচবে না।
সেই আওয়ামী লীগ এক যুগ ধরে রাষ্ট্র চালানোর দায়িত্বে,  যার প্রধান শেখ হাসিনা । যাকে মুরব্বীরা এখনো বলেন শেখের বেটি। আকাশ ছোঁয়া প্রত্যাশা তাঁর  কাছে। কিন্ত কি এক অদৃশ্য কারণে,  সংখ্যালঘু  নির্যাতন থামছেই না!  অনেকেই দাবী করছেন এর থেকে উত্তরণের পথ ৭২ এর সংবিধানে  ফিরে যাওয়া। কেউ বলছেন ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা। কিন্ত প্রতিটা সংখ্যালঘু মানুষ মনে করে,  প্রয়োজন অপরাধী  হিসাবে  অপরাধীর বিচার হওয়ার।  সংখ্যালঘু  নির্যাতনের প্রতিবাদে লন্ডনে বেশকিছু সভা সমাবেশ হয়েছে। খুব লক্ষনীয় বিষয়,  হিন্দু মুসলমান যারা সেখানে সমবেত হয়েছিলেন, একজন বক্তা ও  কোথাও একবার উল্লেখ করেন নি বাংলাদেশে এই নির্যাতন মুসলমান ধারা সংগঠিত হয়েছে বলে। সবাই বলার চেষ্টা করেছেন  কোন ধর্মই এই ধরণের ঘটনা সমর্থন করে না। এরা কেউ কোন ধর্মের নয়, এই মানু্ষগুলো সন্ত্রাসী। এই বিশ্বাস টুকো আমাকে আশা জাগিয়েছে।
এই  লেখাটা  হওয়ার কথা ছিল শেখ হাসিনার সাফল্যগাঁথা নিয়ে। যুক্তরাজ্যে সুস্বাগতম জানিয়ে। কিন্ত তার বদলে  অভিযোগের  ঢালি সাজিয়ে তাঁকে বরণ করে নিচ্ছি। 
আব্দুল গাফফার  চৌধুরী,  আমাদের প্রিয় গাফফার ভাই,  হাসপাতালের  বেডে শুয়ে আছেন। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী  তাঁকে দেখতে যাবেন।  প্রতিটা দূর্যোগময় মুহুর্তে গাফফার ভাই হাত খুলে লেখেন। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন  নিয়ে বাংলাদেশে কেউ খুব একটা কথা বলছেন না।   যে মানুষটি সবচেয়ে  বেশী সোচ্চার থাকতেন বলে আমার বিশ্বাস তিনি গাফফার চৌধুরী। 
প্রধানমন্ত্রী  যখন লন্ডনে আসবেন ঠিক তখনই মিজানুর রহমান আজহারীকে লন্ডন নিয়ে আসার চেষ্টা করে একদল মানুষ। বিষয়টি কাকতালীয়  নয়। বরং পরিকল্পিত। বিএনপি জামায়াত প্রতিবারই এইদেশে আন্দোলন বিক্ষোভ করে, বিএনপি এইবার ও বিশাল প্রস্তুতি নিয়েছে আন্দোলনের।
তাই  ভীন্নভাবে সেই আন্দোলনে সাধারণ  ধর্মপ্রাণ মানুষকে উসকে দেয়ার প্রচেষ্টা ছিল, তাদের  মিশন আজহারী।
 কিন্ত অবাক করার বিষয় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ এর সামান্যতম প্রতিবাদ করার ও চেষ্টা করে নি। একদল সাধারণ মানুষ আজহারীর যুক্তরাজ্য সফর বাতিল করার আপ্রাণ চেষ্টা করে এই যাত্রায় তার আগমন হয়তো  ঠেকিয়ে দিয়েছে । যারা বিন্দুমাত্র ভাবে আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট  নয়।  আমি জানি গাফফার ভাই হাসপাতালে  না থাকলে সবার আগে কলম ধরতেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নয়, প্রয়োজনে  আব্দুল মোমেন কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইতেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে সামলাতে  বলতেন। অথবা লাগাম টানতে বলতেন। কিন্ত আমাদের সেই সাহস,  ক্ষমতা কোনটাই নাই।
মিতালী মুখার্জীর সেই বিখ্যাত ” ফিরে আসবে না জানি আর কোনদিন,  তবু পথপানে চেয়ে থাকি,  তবু আশা বেঁধে রাখি” গানের মত আমরা এখনো  আশা বেঁধে রাখি।  বিশ্বাস করি একজন শেখ হাসিনা আছেন,  যিনি একদিন বঙ্গবন্ধুর  অসাম্প্রদায়িক  বাংলাদেশ ফিরিয়ে দিবেন।
লেখকঃ সম্পাদক  ব্রিকলেন,   যুক্তরাজ্য  প্রতিনিধি দৈনিক কালের কন্ঠ।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০