লন্ডনের নির্লজ্জ কিছু স্বামীদের উদ্দেশ্যে বলছি

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

নাজারতুন নাঈমঃ
আগে ছোটবেলা দেখতাম বেশীরভাগ অসুস্থ শীর্ণকায়া নারী দুইটা তিনটা বাচ্চা নিয়ে ভিক্ষা করতেছে । তাদেরকে কেউ ঘরের কাজেও রাখতো না , যদি বলতাম এদের বাবা কোথায় ভিখারিণী বলতো বাচ্চাদের বাবা তাকে ছেড়ে আরেকটি বিয়ে করেছে অন্য বস্তিতে থাকে । তার চারটি বাচ্চা , বড়টা সাত, দুই নাম্বারটা পাঁচ , ঐ গুলোকে মানুষের ঘরে কাজে দিয়ে দিয়েছে । সমাজ বদলেছে , অনেক রাষ্ট্র কল্যাণকামী হয়েছে নারী এবং শিশুদের উপর । কিন্তু এত উন্নতির পরও কিছু নির্দয় , নীতিহীন , সীমাহীন চরিত্রহীন পুরুষদের সমাজ সংশোধন করতে পারছে না ।অনেক পুরুষ এখনও সেই ভিখারিণীর চরিত্রহীন স্বামীর মত । করনার তান্ডবে সারা বিশ্ব কাঁপছে । এই লন্ডনে ব্যাবসা বাণিজ্যে এসেছে স্থবিরতা কিন্তু কিছু স্বামীদের জীবন নৌকায় যেন আনন্দের বান এসেছে । করোনার এই দূর্যোগে সরকার দুস্থ জনগণকে নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে । সরকার তার মানবিক দায়িত্ব পালন করেছে । কিন্তু ঐ ভিখারিণীর স্বামীর মত কিছু স্বামী আছে এই সব অনুদান সব গ্রাস করে গাড়ী কিনছেন , দেশে যাচ্ছেন , আর ভাবীর বাড়ি , খালার বাড়ী , বন্ধুর বাড়ী মিষ্টি নিয়ে খেজুরী আলাপ করছেন , অত:পর দ্বিতীয়বার সং সেজে রং মাখছেন নিজের ছেলের চেয়েও ছোট একটি মেয়েকে বিয়ে করছেন । এইসব নির্লজ্জ ইতর প্রাণীরা দুনিয়া লন্ডভন্ড হয়ে গেলেও শোধরাবে না । এখন তো আবার যোগ হয়েছে প্রযুক্তি । প্রতিসেকেন্ডে যার তার সাথে ওয়াট্সএপ , ম্যাসেন্জারে যোগাযোগ করা যায় , এতে এইসব চরিত্রহীনদের আরও সুবিধা বেড়েছে, তাদের মনের কামনা বাসনা ষোলকলায় পূর্ণ হয়েছে। ।
প্রায় সময় অনেক দু:খিনী মা ফোন দেন । আমি বলি বোন আমাকে বললে আমিতো কোন সমাধান দিতে পারব না, উনারা বলেন জানি তবে আমাদের বিশ্বাস আপনার কাছে বললে আপনি আর যাই করুন রং মাখিয়ে অপবাদ দিবেন না। বললাম আমি যে লিখি এবং আপনাদের কাছ থেকে শুনেই যে লিখি । তারা বলেন অসুবিধা নেই , লিখেন বিধায় আপনাকে বলতে ইচ্ছে হয় ,লাভ ক্ষতি জানি না , আপু লিখেন । কাউকে না কাউকে তো বলতে হবে , লিখতে হবে ।
সেদিন আবার এক তরুণী ফোন দিল । বলল এই করোনাকালে তার ঘর ভেংগেছে । তার স্বামী তাকে ফোর্স করে বলছে তুই পুলিশ ডাক , বল আমি তোকে অত্যাচার করি । বলল তার স্বামী তার ইনকাম খরচ করবে না , এমনকি বাচ্চারা স্কুলে যাবে সেই বাসভাড়া দিবে না , কোন রকমে আলুর চিপ্স খাইয়ে পাউরুটি খাইয়ে বাচ্চাগুলোকে সে বড় করছে । বলল তারপরও চাচ্ছিলাম বাচ্চাগুলো যেন ব্রোকেন পরিবারে নিমজ্জিত না হয় । এত কিছুর পরও যখন পারছিলাম না এর উপর সে নিজেই বলতেছে পুলিশ ডাক তখন আর কি করা , পুলিশের মাধ্যমে সরকারের অনুদানে আসলাম । একমাস মা বাচ্চাদের হোটেলের এক রুমে রাখল , তিনবাচ্চা আর মা একরুমে একমাস থেকে হাপিয়ে উঠছিলো, মানবাধিকার কর্মীর বিশেষ সহযোগিতায় সরকার পরবর্তী মাসে দুইরুমের একটা অস্থায়ী ঘর দিল। বাচ্চার বাবার মনের স্বাদ পূর্ণ হল , তিনি ঘর ভাড়ার ঝামেলা থেকে মুক্ত হলেন ।দাম্পত্য জীবনে এখন সেপারেশনের প্রক্রিয়া চলমান । এখন এই অবস্থায় চালাক স্বামী দেশে গেছেন আরেকটি বিবাহের খায়েশ নিয়ে। তরুণী মেয়েটি বলল খাচ্ছি পরছি বাচ্চাদের মুখে আগের চেয়ে আরও ভাল খাবার দিতে পারছি কিন্তু আমার দুটো ছেলে একটি মেয়ে তারা যে কি পরিমাণ মানসিক কষ্ট পাচ্ছে সে আমি বুঝি , আমি তো মা “। সন্তানরা যেমন মা কে চায়, বাবাকেও চায় , মা বাবাকে একত্রে মিলেমিশে থাকা দেখতে চায়। স্রস্টাও বাবা মা ঘেরা সংসারের তাগিদ দিয়েছেন , এইটাই তো সৃস্টির নিয়ম । এই একটি কারণে প্রাণীজগতের মধ্যে মানবসমাজ আলাদা , মানুষরা আদিম সমাজ থেকে নিজেকে উন্নত করেছে মা বাবা ঘেরা সংসার তৈরী করে।একজন নির্দয় বাবা যখন সংসার ভেঙ্গে দিল তখন মা হয়তো সব বাচ্চাদের ম্যানেজ করতে পারবেন কিন্তু তো মা বাবার মিলিত স্নেহঘেরা যে মায়াবী সংসার তা তো তাদের দিতে পারবেন না ।
মেয়েটি তার শৈশবের কথা বলে বলল “আমরা পাঁচভাইবোন , আমার বাবা একজন স্কুল মাস্টার , খুব পয়সা ছিল না কিন্তু বাবা তার সেই নির্ধারিত বেতনে খুব সুন্দরভাবে সংসার চালাতেন । ঘরের আংগিনায় বাবা মা দুজনে মিলে সবজি চাষ করতেন , বাবা দুর গ্রামের বাজার থেকে মাসের চাল নিয়ে আসতেন । আমাদের দুটো গরু ছিল , হাঁস মুরগী ছিলো । বাবা মা ছিলেন পরিশ্রমী । সব কিছু ফ্রেশ আমাদের খাওয়তেন। যেটা উনারা পারেননি সেটা হল হয়তো মার্ক্স স্পেন্সার , হেরট্স , জারা, আড়ং, এই সব ব্রান্ডের কাপড় পরিনি । কিন্তু এইগুলো র নামও তখন জানতাম না । যখন ওয়ান , টু ক্লাসে পড়তাম তখন ঈদ আসলে বাবা বড় থান কাপড় নিয়ে আসতেন মা ঐ থান দিয়ে বাবাকে ফতুয়া , ভাইদের শার্ট এবং আমাদের ফ্রক বানিয়ে দিতেন । পরে আমাদের মফস্বল শহরে শপিং মল এল , আমরা ও শপিং মল থেকে পোষাক কেনা শুরু করলাম । বাবার তার যতটুকু সামর্থ্য ছিল সব দিয়ে আমাদের জীবনকে ভরিয়ে দিয়েছেন ।”
এই লন্ডনে কিছু চরিত্রহীন নির্লজ্জ বাবাদের আচরণ দেখলে থমকে যাই । বউ বাচ্চাদের পেছনে একটা পয়সা খরচ করবে না উল্টো বউ বাচ্চা দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে ইউনিভার্সেল ক্রেডিট তুলবে । সেখান থেকে সামান্য কিছু খাবার এনে বউ বাচ্চাদের জীবিত রাখবে । সরকারী খয়রাত বন্ধ হয়ে যাবে তাই বউকে চাকুরী করতে দিবে না , আবার বউ চাকুরীতে গেলে বাচ্চা দেখবে না , এরকম অসহনীয় পরিস্থিতি সৃস্টি করে রাখবে ।
এই ধরনের স্বামী করনা থেকেও ভয়াবহ । তাই বাধ্য হয়ে সন্তানদের বুঝাতে হয় বাচ্চারা বাবা তোমাদের ফেলে চলে গেছে , বাবা তোমাদের ব্রোকেন পরিবারে টেনিস বল বানিয়েছে । দূ:খ ভূলে যাও , পড়াশুনায় মন দাও , তোমরা মায়ের সন্তান , “তোমরা জন্মেছো এই মায়ের কোলে।”
নাজরাতুন নাঈম ইসলাম
Nazratun Nayem Islam
23, 9, 2021

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০