- হরমুজ আলী
ঐ দেখ, আমি হাত খুলে সিনা টান দাঁড়িয়ে আছি
বায়ান্ন বছরের দীর্ঘ বিরহ, আর নিতে পারিনারে —
বুকে আয় বন্ধু, জড়িয়ে ধরে থাক হাতের পেশীগুলো অবস হওয়া পর্যন্ত।
চাইলে ফিরিয়ে দেবো বাড়িটাও
যা তোর বাপ আমার বাপের কাছে বিক্রি করে গিয়েছিলেন।
জানিস, পুকুর পাড়ের নারিকেল গাছটা ঝুকতে ঝুকতে পানির কাছাকাছি চলে এসেছে,
তোর ঠাকু’মার হাতে লাগানো গাছটি মনেহয় এখনো তাকে খুঁজে,
সন্ধ্যাপূজার ঠিক আগে আগে চটজলদি ঘাটে আসা ঠাকু’মা নিত্যকার অভ্যাসমতো আলতো করে ছুঁয়ে যেতেন আকাশ মুখো চিরল পাতা
আর বিড়বিড় করে দিন গুনতেন – কবে আকাশ ছুঁবে!
নারিকেল গাছটা নেতিয়ে পড়ার আগে ঠিকই আকাশ ছুঁয়েছিল, শুধু ঠাকু’মার দেখা হয়নি!
তোর নিশ্চয়ই মনে আছে গৌরাঙ্গ —
‘বিন্নাটেকি’র গরুর গুইট থেকে যার-যার গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছি
একদিকে মাগরিবের আজানের ধ্বনি বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে, আরেকদিকে তোদের পাড়ার উলু ধ্বনিও জানান দিচ্ছে সৃষ্টিকর্তার মাহাত্ম্য,
আমরাই কেবল ভ্রুক্ষেপহীন,
কতো বেহিসেবী কথা আমাদের —
মার্বেল, গোল্লাছুট থেকে ‘শরির জাগা’র সদ্য আবিস্কৃত অনুভূতি —
যার নাম কিংবা কারণ
তুইও জানিসনা, আমিও না!
তোর বড়দি, মালতীদির ভুবন ভোলানো রূপ আর চপলা স্বভাব নিয়ে আড়ালে আবডালে কথা হতো ঠিকই
কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিতের ডরভয় ছিলোনা,
কোনো অঘটন ছাড়াই মালতীদির বিয়ে হয়েছিলো,
এখন মানুষ কেনো দেবদেবীই আমাদের হাতে নিরাপদ নয়!
সবকিছু কেমন যেনো অপরিচিত মনেহয় গৌরাঙ্গ!
এপারের সাথে পাল্লা দিয়ে ওপারেও না-কি অসুর জেগেছে!
আসলে কি জানিস – মানুষের জাত হয়, অসুরের হয় না – তারা রাম হলে যা, রহিম হলেও তা!
তারপরও ফিরে আয় গৌরাঙ্গ – বাকি দিনগুলো একসাথে হাঁটি আর ‘মানুষ’ এর তালাশ করি।
লন্ডন, ২৮ অক্টোবর ২০২১
ছবিঃ অনলাইন থেকে নেয়া