এই লেখার অপরাধে আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেবে

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

ফরিদ আহমেদ কানাডা প্রবাসী লেখক , শিক্ষক

এই যে একদল লোক সশস্ত্র হয়ে দলবদ্ধভাবে প্রতিমা ভাঙছে, পূজা মণ্ডপ তছনছ করছে, শুধুমাত্র হিন্দু হবার কারণে নিজের দেশের মানুষদেরই ঘৃণ্য কোনো পশুর মতো আক্রমণ করছে, খুন করছে, ধর্ষণ করছে, লুটপাট করছে, ঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছে, এর পিছনে ধর্মের কোনো হাত নেই বলাটা আসলে সত্য থেকে বহু দূরে থাকা, সত্যকে গোপন করা। উটপাখি যেমন ঝড় দেখে বালুতে মুখ লুকায়, আপনিও ঠিক সেই কাজটাই করছেন।
ধর্ম আমাদের এগুলো করতে বলে না, অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধা করতে বলে বরং, এইসব ভুগিচুগি গল্প আপনি বানাচ্ছেন শুধুমাত্র নিজেকে সান্ত্বনা দেবার জন্যই না, বরং ওইসব অপকর্মকারীদের দায় আপনি যে নিতে চান না, আপনার প্রিয় ধর্মের গায়ে যেনো কোনো কালিমা না লাগে, সেই কারণে এগুলো বলা আপনার। আপনার মায়াটা আসলে আপনার ধর্মের প্রতিই, আক্রান্তদের প্রতি আপনার কোনো দায়া-মায়া নেই। মানুষের এমন দুর্দশাতেও আপনার যে দয়া-মায়া যে নেই, সেটাও ওই ধর্মেরই কারণে। ওরাতো আপনার ধর্ম পালন করে না। কাজেই ওদের প্রতি মায়া দেখিয়ে লাভটা কী আপনার? প্রকাশ্যে যে আহা-উঁহুটা করছেন, সেটাও করতে হয় বলেই করছেন। নইলে আক্রমণকারীদের সাথে সাথে আপনাকেও যে লোকে পশু বলে ডাকবে। পশু ডাক শুনতে চান না আপনি।
যারা বর্বর পশুর মতো মানুষের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, তারা কিন্তু ধর্মের কারণেই করছে। একবারও বলছে না যে ভাই আমি একটা দুর্বৃত্ত, দুর্বৃত্তের কাজই হচ্ছে মানুষের উপরে ঝাঁপানো, তাই ঝাঁপাচ্ছি। বরং বলছে যে তাদের ধর্মের কোনো অপমান তারা সইতে পারছে না বলেই তারা এইসব কাজ করছে ধর্মীয় কাজের অংশ হিসাবেই। আপনার ধর্মের গায়ে কালিমা দেবার জন্য তারা এগুলো বলছে না, বরং আপনার ধর্মের সম্মান বাঁচাতেই খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ করছে তারা। ধর্মের প্রকৃত সৈনিক তারাই। যুদ্ধের ময়দানের সমস্ত উত্তাপ তারাই পোহাচ্ছে। আপনার মতো সুবিধাবাদী তারা না, যে কিনা ধর্মেও আছে আবার জিরাফেও আছে। ধর্ম রক্ষার সম্মুখসারির সৈনিকদের দুর্বৃত্ত আখ্যা দিয়ে আপনি বরং তাদের অপমানই করছেন।
এখন আপনি লাফ দিয়ে এসে পড়ে বলবেন যে ভাই, কই আমি কিংবা আরও অনেক লোকইতো আছি, আমরাতো হিন্দুদের উপরে ঝাঁপাচ্ছি না। বরং আমাদের অনেক হিন্দু বন্ধু আছে, তারা আমাদের বাড়িতে আসে, আমরা তাদের বাড়িতে যাই, এক পাতে খাই। হ্যাঁ, আমি জানি, আপনারা এই ‘মহৎ’ কাজটা করেন। এই কাজটা আপনার ধর্ম আপনাকে শেখায় নাই। আপনি শিখেছেন অন্য জায়গা থেকে। সমাজে টিকে থাকতে গেলে আমরা শুধু ধর্ম থেকেই শিখি না, অন্যন্য অনেক সোর্স থেকেও আমরা শিখে থাকি। ধর্মের অনেক শিক্ষাকে আমরা উপেক্ষা করেও যাই। কারণ, না গিয়ে উপায়ও নেই। নইলে প্রতি মুহুর্তে খুন খারাবি করা লাগতো, প্রতিমা ভাঙা লাগতো। প্রতিমা দেখে আপনার যদি অনুভুতিতে আঘাত না লাগে, তবে ধরে নিতে পারেন যে আপনিও আসলে অতো বেশি ধার্মিক না। ধর্মের খাঁটি অংশে আপনি এখনো পৌঁছাতে পারেন নাই। আপনার ধর্মের প্রথম বিজয় কিন্তু অর্জিত হয়েছিলো কাবা শরীফে পৌত্তলিকদের মূর্তি ভাঙার উৎসবের মধ্য দিয়েই। সেই গৌরবময় ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে অস্বীকার করছেন আপনি এখন আপনার ধর্মীয় অ-খাঁটিত্বের কারণে।
সাম্প্রদায়িক হামলা যখন হয়, তখন তার সাথে অনেক সময় রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক ব্যাপার যুক্ত থাকে। এটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু, এগুলো হচ্ছে মাধ্যমিক কারণ। প্রাথমিক কারণটা ওই ধর্মই। যারা আক্রমণ চালাচ্ছে, তারা ধর্মের জোশেই আক্রমণ চালাচ্ছে, আর যারা মার খাচ্ছে, তারাও ধর্মের কারণেই মারটা খাচ্ছে। মার দেয়া লোকদের জন্য আপনি যে গোপন সহানুভূতি পোষণ করছেন, এর পিছনে যে ‘যদি’ ‘কিন্তুর’ যুক্তি সাজাচ্ছেন, মার খাওয়াদের পাশে দ্ব্যর্থহীনভাবে দাঁড়াতে পারছেন না, এর সবকিছুর সাথে ধর্ম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর বাইরে যদি কিছু থাকে, সেটার সাথেই আসলে ধর্ম সংশ্লিষ্ট না। আপনার যদি আক্রমণকারীদের প্রতি ঘৃণা জন্মায়, আক্রান্তকারীদের প্রতি মনের মধ্যে মমতা আসে, ধরে নিতে পারেন, সেটার সাথেই আসলে ধর্মের কোনো যোগসূত্র নেই। আপনার এই শুভ চিন্তা, শুভ্র মানসিকতা অন্য কোনো উৎস থেকে এসেছে।
আমার এই লেখাটা পড়ার পরে রাগে যদি আপনার দাঁত যদি কিড়মিড় করে, আমাকে জঘন্য একটা লোক বলে মনে হয়, মনের মধ্যে যদি কুৎসিত কোনো গালির জন্ম নেয় আমার জন্য, নিশ্চিন্তে ধরে নিতে পারেন, সেটার পিছনেও আপনার সেই ধর্মই আছে। আপনি যে লাঠিসোটা, দা-তলোয়ার নিয়ে আমাকে মারতে আসছেন না, সেটা আপনি পুরোপুরি ধার্মিক না বলেই হচ্ছে। দি আপনার চিন্তাশক্তিকেপ্রকৃত ধার্মিক আমার এই লেখার অপরাধে আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেবে।
এমনিতে আপনি আসলে অতোটা অসভ্য লোক না। ধর্ম য আংশিকভাবে ধ্বংস করে না দিতো, আমি নিশ্চিত সেক্ষেত্রে আপনি ঠিকই ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনতে পেতেন, খুন হওয়া মানুষের দীর্ঘশ্বাস আপনার কানে বাজতো, অগ্নিদগ্ধ মানুষের আহাজারি আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করতো, আপনি বিচলিতবোধ করতেন। এখন করছে না, কারণ হিন্দুদের আপনি যে মানুষ বলেই ভাবতে পারছেন না। মানুষ বলে ভাবতে পারছেন না বলেই এমন ক্রান্তিকালে, দেশের মানূষের এমন দুঃসময়েও ফেসবুকে সুন্দর সুন্দর ছবি পোস্ট দিতে পারছেন আপনি। হামলার সাথে পবিত্র ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই বলে রোম্যান্টিক সব গদ্য-পদ্য রচনা করতে পারছেন অবিচলিত মানসিকতায়।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০