
জুয়েল রাজ-
বাংলাদেশের আওয়ামী বিরোধী রাজনীতি ও ভারত বিরোধীতা সমান্তরাল ভাবে চলে। এইটা নতুন কোন বিষয় নয়। ১৯৬৯ সালের আগরতলা মামলা থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ,সব সময়ই এই প্রচারণা হয়েছে। এই সব ভারতের ষড়যন্ত্র , বাংলাদেশ ভারত হয়ে যাবে, কিন্তু দীর্ঘ ৫৪ বছরে ও ভারত আর বাংলাদেশ দখল নিতে পারে নাই। বাংলাদেশিরা ৫৪ বছর ধরেই সীমান্তে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে! লাখ লাখ সেনা শহীদ হয়েছে! কোটি কোটি মানুষ প্রাণ দিয়েছে ভারত ঠেকাতে !
২০২৪ এর ৫ আগস্টের তথাকথিত কোটা আন্দোলনে ও এই ভারত বিরোধী ইস্যু খুব জোরালো ছিল। এবং পরবর্তী সময়েও দিল্লী না ঢাকা? এই শ্লোগান ব্যাপক ভাবে উচ্চারিত হতে দেখি আমরা।এবং এর প্রেক্ষাপট ওদীর্ঘদিন ধরে নানা বয়ানের মাধ্যমে তৈরী করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের করা নানা চুক্তি নিয়ে মনগড়া বয়ান। বাংলাদেশে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা “র” এর হস্তক্ষেপ। সেনাবাহিনী সচিবালয় সহ সরকারী বেসরকারী নানা সেক্টরে ২৬ লক্ষ ভারিতীয়র চাকরী এইসব বয়ান দিনের পর দিন তৈরী করা হয়েছে।
এবং এই বয়ান ১৯৭১ সাল থেকে যে নির্দিষ্ট গোষ্ঠী করে আসছিল সেই একই গোষ্ঠী এই একই গল্প চালিয়ে গেছে দশকের পর দশক। এবং ভারত সরকারের সাথে গোলামী চুক্তি করে দেশ বিক্রির অভিযোগ প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে ও পর্দা ফাটিয়ে উচ্চারিত হয়েছে।
কিন্ত ইউনুস সরকার গত প্রায় দুই বছরে ভারতের সাথে একটা চুক্তি বাতিল হতে দেখি নাই। এই সর্বশেষ দেখলাম ছাত্র উপিদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া এক ফেইস বুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন যে ভারতের সাথে করা ১০ টা চুক্তি নিয়ে কথা হচ্ছে এবং কিছু নবায়ন ও রিভিউ করা হবে।
সম্প্রতি খাগড়াছড়ির ঘটনায় ভারতের বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধন আছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে যাতে দুর্গাপূজা না হয়, একটি মহল সেই চেষ্টা চালাচ্ছে। এই মহলই খাগড়াছড়িতে এসব করছে। এই ঘটনা ভারত বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধনে ঘটছে। রাষ্ট্রের আইন শৃংখলা বাহিনীর অভিবাবক যখন এই ধরণের বক্তব্য দেন,বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ,ধরে নিতে হবে তার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে। টেলিভিশন টক শো বা রাজনৈতিক বক্তব্যে এই জাতীয় বক্তব্য খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু সেই একই বক্তব্য রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যাক্তির বলা মানে এর একটি ভিত্তি আছে। আর হিসাব টা মিলে যায় যখন , জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, অনেকে বলে জামায়াত ক্ষমতায় এলে ভারতের হামলার আশঙ্কা রয়েছে। আমি বলেছি দোয়া করতেছি এরা যেন ঢুকে পড়ে। তখন আমাদের ৫০ লাখ যুবক ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশ আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশনের (কোবা) উদ্যোগে আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই কথা বলেছিলেন।এ সময় ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে তিনি দাবি করেন, ভারত ঢুকলেই আমাদের সেই বদনাম যাবে, যা ১৯৭১ সালে চাপানো হয়েছিল। তখন আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করার একটা সুযোগ পাবো।
তিনি জানান, যুদ্ধের ক্ষেত্রে যুবকদের অর্ধেক গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেবে, বাকিরা বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। রাসূল (সা.)-এর গাজওয়া সম্পর্কিত হাদিসের বাস্তবায়ন তখন মহাপরিকল্পনা হয়ে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ ও অন্য বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নিয়েও সমালোচনা করেন। তার দাবি, এরা ভারতের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ করবে না। তখন সংগঠিত শক্তি আমরাই হব, আমরা হবো খাঁটি মুক্তিযোদ্ধা।
পাকিস্তানে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন তেহরিক–ই–তালেবানে (টিটিপি) যোগ দিয়ে সেনা অভিযানে নিহত বাংলাদেশি তরুণ ফয়সাল হোসেনের (২২) পরিবার জানত তিনি দুবাইপ্রবাসী। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
ইমারাত এ ইসলামিয়ার (তালেবান সরকার) আমন্ত্রণে আফগানিস্তান সফরে গেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় সাতজন আলেম। সফরে আফগানিস্তানের প্রধান বিচারপতি, একাধিক মন্ত্রী, শীর্ষ আলেম ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করবেন তারা ।জামায়াত আমেরিকায় দেয়া বক্তব্য এবং তাদের অনুসারী দলীয় কর্মকান্ড আমাদের একটা ধারণা দেয় একটা যুদ্ধ বা সংঘাত চাইছে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি।যাকে বলে যুদ্ধকে আমন্ত্রণ করে বরণ করে নেয়া।
এখন ভারত এই উস্কানীর ফাঁদে পা দেয় কী না সেটা ও দেখার বিষয়। ইতোমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি পুরো বিশ্বরাজনীতিকে যে ভাবে ঝাঁকি দিয়েছে, তা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে।বিশেষ করে চীন ভারতের বরফ গলা, আফগানিস্তানের সাথে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ,সবকিছুই এক নতুন মাত্রা তৈরী করেছে। বিশ্ব মোড়লদের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে যাচ্ছে। আর এই রাজনীতির ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা বর্তমান ইউনুস সরকার। পাকিস্তান বাংলাদেশ এখন গলার মালা। জাহাজ, বিমান ,ভরে বাংলাদেশের জন্য পাকিস্তানি রুপি আসছে! বাংলাদেশে কল কারখানা গড়ে উঠছে! বাংলাদেশ পাকিস্তান ভিসা ফ্রি যাতায়াতের দুয়ার খোলে দিচ্ছে, এর মাঝে কুটনৈতিক ও সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে এই ব্যবস্থা। ইউনুস সরকার ও তার সহযোগীদের মিত্র হয়ে এই খেলায় নতুন করে যোগ দিয়েছে তুরস্ক যা এখন ওপেন সিক্রেট।
আফগান যুদ্ধ পরিবর্তী সময়ে দক্ষিন এশিয়া বা আমাদের অঞ্চলটি শান্ত আছে ,কোন যুদ্ধ বিগ্রহ নেই। তাই জোর করে হলেও উসকে দিয়েও যাতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের মত একটি পাতানো যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া যায়,সেই চেষ্টাই চলছে। এই নতুন বন্দোবস্ত আর সংস্কারের নামে বাংলাদেশকি কি এই যুদ্ধভার বইতে পারবে?