
অনলাইন ডেস্ক-
উত্তর আমেরিকায় গত ১৯ নভেম্বর, ২০২৫; বুধবার,
বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী সংগ্রামী কমরেড দাশ’র ষোলতম প্রয়াণদিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল “স্মরণসভা”
অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও লেখক তাজুল মোহাম্মদ’র সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় কানাডা সময় সকাল দশটা,যুক্তরাজ্য সময় দুপুর তিনটা এবং বাংলাদেশ সময় রাত্র নয়টায় উক্ত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
স্মরণসভা অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রথম এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’র স্মরণে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হয়।
বিশ্বের নানা প্রান্ত হতে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ সামাজিক, রাজনৈতিক, শিল্পী সংস্কৃতির নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। লেখক তাজুল মোহাম্মদ বলেন – শিল্পী সংগ্রামী কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’র বিপ্লবী রাজনৈতিক জীবন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা এবং তার প্রতি বিপ্লবী শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশে এই স্মরণসভার অনুষ্ঠান। তিনি সঞ্চালনায় আরো বলেন বিগত সরকারের হাওরের যোগাযোগ উন্নয়নে যে উড়াল সেতু আমরা পাই তার চিন্তা আমরা আশির দশকেই কমরেড শ্রীকান্ত দাশের চিন্তা হতে পাই।
বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ,পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য,অধ্যাপক ডঃ সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন, অধ্যাপক ডাঃ সুধেন্দু বিকাশ দাস, আইনজীবী ও লেখক সুব্রত দাশ, যুক্তরাজ্য সিপিবির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ও যুবনেতা, সলিসিটর শাহরিয়ার বিন আলী, কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’র দৌহিত্র ক্লিন্টন সরকার,কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’র পুত্র রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী সুশান্ত দাস সহ আরো অনেক।
স্মরণসভায় অতিথি বক্তা হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ,সাবেক উপাচার্য,শিক্ষাবিদ ডঃ সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন বলেন- “ আমি অনেক জায়গায় অনেকের কাছ হতে কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’র নাম শুনেছি। ছিল তাঁর বিশাল কর্মময় জগৎ ; এক হলো তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, দুই হলো তিনি কমরেড, ঐ সময়ের কমরেড, যাঁরা নিঃস্বার্থ ও নির্লোভ ছিল, শুধু জনগণের জন্য কাজ করেছেন; তিন হলো তিনি তাঁর দেহকে দান করেছেন বিজ্ঞানের শাখায় মানুষের কল্যাণে”। তিনি আরো বলেন আমিও একসময় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিপিবির কনিষ্ঠতম সদস্য ছিলাম; সিপিবিকে উদার্ত আহ্বান জানাবো কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’র বীরত্ব গাঁথা অবদান, কর্মপ্রেরণা সবার মাঝে তোলে ধরার জন্য চেষ্টা করুন।
ভার্চুয়াল স্মরণসভায় সংযুক্ত ছিলেন ডাক্তার মানস দাস, যুক্তরাজ্য উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আখতার সোহেল, যুক্তরাজ্য যুব ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ইফতেখারুল হক পপলু, কানাডা ভিএজি,বি এর সদস্য সচিব হামোম প্রমোদ সিনহা, লেখক ও ব্যবসায়ী অলক চৌধুরী, সুকান্ত দাশ, নয়ন মঞ্জুরি গোপিকা দেবী, শিমুল চন্দ্র দাশ,কনিক রায়, এল্টন সরকার প্রমুখ।
আইনজীবী ও লেখক সুব্রত দাশ’র তথ্যমূলক আলোচনায় উল্লেখ করেন, ১৯৪৫ সালের ৮- ৯ এপ্রিল নেত্রকোনায় যে কৃষক সম্মেলন হয়েছিল, তা উদ্বোধন করেন পাঞ্জাবের বিখ্যাত বিপ্লবী কেশর সিং। সেই সম্মেলনে শ্রীকান্ত দাশ অংশগ্রহণ করেন এবং সেখানে গণসংগীত পরিবেশন করে প্রশংসিত হন। সত্যেন সেনের একটি ছোট পুস্তিকা ‘বাংলাদেশের কৃষকের সংগ্রাম ‘ হতে নেত্রকোনার কৃষক সম্মেলন সম্পর্কে অনেককিছু জানা যায়। তিনি আরও বলেন, শ্রীকান্ত দাশ তাঁর নীতি আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি ও সামাজিক প্রতিটি আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
অধ্যাপক ডাক্তার সুধেন্দু বিকাশ দাস স্মৃতিচারণ করে বলেন, আশি দশকের ঘটনা। কর্মজীবনে প্রায় এক যুগের কাছাকাছি সময় আজমিরিগঞ্জ হাসপাতালে ছিলাম। সেই হিসাবে শাল্লা-আজমিরীগঞ্জে মানুষের বিচরন থাকায় কমরেড শ্রীকান্ত দাশ সম্পর্কে জানতাম তাছাড়াও উনার দেহদানের সময়ে আমি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যাপনায় ছিলাম।
উল্লেখ্য সুনামগঞ্জ শাল্লার আঙ্গারুয়া গ্রামে যোগেন্দ্র দাশ ও জ্ঞানদায়িনী দাশ দম্পতির সন্তান ছিলেন কমরেড শ্রীকান্ত দাশ। জন্ম ৫ জুলাই ১৯২৪। মৃত্যু ১৯ নভেম্বর ২০০৯। দেহ উইল করে যান ২০০৪ সালের ৬ অক্টোবর। তাঁর জন্ম একটি সমাজ-সচেতন অগ্রসর চিন্তার পরিবেশে। তাঁর সমাজতান্ত্রিক দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া পিতার কাছ থেকে। তিনি আমৃত্যু একটি শোষণহীন সাম্য সমাজ বিনির্মাণে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন প্রশ্নাতীত, নিষ্ঠা ও সততার সাথে। তিনি আমৃত্যু গনমানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রামে নিবেদিত ছিলেন। মানুষকে ভালোবাসার এক অমিত শক্তিতে বলীয়ান ছিলেন । শোষণ ও দারিদ্র লাঞ্চিত এই সমাজের বিরুদ্ধে, তিনি এক দ্রোহী সংসপ্তক ছিলেন। ছিলেন সমাজ পরিবর্তনের চিন্তক। মানুষকে ভালবেসে গিয়েছেন সারাজীবন। আর এই ভালোবাসার জোরেই তিনি নিজ দেহ দান করে গেছেন চিকিত্সা শাস্ত্রের শিক্ষা ও গবেষণার কাজে।



