রয়টার্সকে দেয়া শেখ হাসিনার সাক্ষাতকার –

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

অনলাইন ডেস্ক- 

গত বছর ৫ আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রথম আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সকে  তিনি  সাক্ষাতকার দেন ।

রয়টার্সকে দেয়া সেই সাক্ষাতকার টি সম্পূর্ণ  নীচে দেয়া হলো-

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে আগামী বছরের নির্বাচনে অংশ নিতে না দেয়া হলে দলটির লাখ লাখ সমর্থক এই নির্বাচন বয়কট করবে।

নয়াদিল্লিতে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ইমেইলে পাঠানো প্রশ্নের উত্তরে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন।

শেখ হাসিনা জানান, তার দলকে বাদ দিয়ে হওয়া নির্বাচনের মাধ্যমে যেই সরকারই হোক তাদের সময়ে তিনি দেশে ফিরবেন না এবং তিনি ভারতেই অবস্থান করবেন।

২০২৪ সালের অগাস্টের ছাত্র নেতৃত্বে হওয়া রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের সময় দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন তিনি। তার বিদায়ের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ শাসন করছে। তারা আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছে। “আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা শুধু অন্যায্যই নয়, বরং আত্মঘাতী,” বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ই-মেইলে পাঠানো প্রশ্নের জবাবে বলেছেন শেখ হাসিনা।

পনের বছর একনাগাড়ে ক্ষমতায় থাকার পর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই প্রথম তিনি সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দিলেন। “পরবর্তী সরকারের অবশ্যই নির্বাচনি বৈধতা থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ সমর্থক, এমন পরিস্থিতি থাকলে, ভোটে অংশ নিবে না। একটি কার্যকর রাজনৈতিক সিস্টেম চাইলে আপনি লাখ লাখ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারেন না,” শেখ হাসিনা বলেছেন।

নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাওয়ার আশা

বাংলাদেশে ১২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি ভোটার আছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দীর্ঘকাল ধরে দেশটির রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন গত মে মাসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। এর আগে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে।

“আমরা আওয়ামী লীগের ভোটারদের অন্য দলকে সমর্থন করতে বলছি না। আমরা এখনো আশা করি শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং আমরা নিজেরাই নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবো,” বলেছেন শেখ হাসিনা।

তবে তিনি বা তার পক্ষে কেউ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেয়ার সুযোগের জন্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সাথে নেপথ্যে আলোচনা করছেন কিনা সে বিষয়ে শেখ হাসিনা কিছু বলেননি। অধ্যাপক ইউনূসের মুখপাত্ররা শেখ হাসিনার মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার অনুরোধে তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে রূপান্তরের জন্য প্রশংসিত হলেও মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভিন্নমত দমনের জন্য অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ২০২৪ সালে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। ওই নির্বাচন বিরোধী দলগুলোকে বর্জন করেছিলো। তাদের শীর্ষ নেতারা হয় জেলে বা নির্বাসনে ছিলেন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধাপরাধ বিচারের আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শেষ করেছে। তার বিরুদ্ধে ২০২৪ এর আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী ১ হাজার ৪০০ জনের মতো মানুষ সেসময় নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েক হাজার।

মূলত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এসব ঘটনা ঘটেছে। একে দেশটির মুক্তিযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হাসিনা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার বা অন্য কথিত অপরাধের সাথে তার ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতা ছিলো না।

“এই কার্যক্রমগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাটক,” বলেছেন তিনি। “এগুলো ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে আনা হয়েছে, যেখানে দোষী সাব্যস্ত করে রায় আগেই ঠিক করা। আমাকে আগে নোটিশ দেয়া বা আত্মপক্ষ সমর্থনের কার্যকর সুযোগ দেয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে,” বলেছেন তিনি।

ফেরার পরিকল্পনা নেই

শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ দেশের ভবিষ্যৎ ভূমিকা পালনে ফিরে আসবে, সেটা সরকারে হোক আর বিরোধী দলে হোক এবং তার পরিবারের এর নেতৃত্ব দেয়ার প্রয়োজন নেই। তার ছেলে ও উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় গত বছর রয়টার্সকে বলেছিলেন যে দল চাইলে তিনি নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন।

“এটা আসলে আমার বা আমার পরিবারের ব্যাপার না। বাংলাদেশের জন্য আমরা সবাই যা চাই, সেখানে সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরতে হবে। কোন ব্যক্তি বা পরিবার আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না”।

১৯৭৫ সালের এক সামরিক অভ্যুত্থানে তার পিতা, তিন ভাই, মা-সহ পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে মেরে ফেলা হয়। শুধুমাত্র শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান।

শেখ হাসিনা বলেন, দিল্লিতে তিনি মুক্তভাবেই বাস করছেন কিন্তু তার পরিবারের সহিংস ইতিহাসের কারণে তিনি সতর্ক থাকছেন।

কয়েক মাস আগে রয়টার্সের একজন সাংবাদিক শেখ হাসিনাকে লোধি গার্ডেনে হাঁটতে দেখেছিলেন। তার সঙ্গে দুজন ব্যক্তি ছিলেন যাদের তার নিরাপত্তারক্ষী মনে হয়েছিলো।

তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যারা তাকে চিনতে পারছিলেন তাদের প্রতি তিনি মাথা নেড়ে সাড়া দিচ্ছিলেন।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭৩০৩১