ইউনূসকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখার ক্যাম্পেইনের নেপথ্যে প্রেস সচিব শফিকুল

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখার প্রচারণার নেপথ্যে কাজ করছেন তারই প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম। ঈদুল আজহার দিন জাতীয় ঈদগাহে জনসমক্ষে ‘স্যার, আপনাকে পাঁচ বছর চাই’—এমন বক্তব্যের পেছনে ছিল ইউনূসের প্রেস উইং এবং এনসিপি’র সমন্বিত পরিকল্পনা।

ঈদের নামাজ শেষে জনতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় হঠাৎ একজন ব্যক্তি ইউনূসকে উদ্দেশ করে এমন মন্তব্য করলে দৃশ্যটি দ্রুত ভিডিও করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল একটি পূর্বপরিকল্পিত ‘স্টেজড অ্যাক্ট’ যার মাধ্যমে জনমত প্রভাবিত করার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যখন জনগণের মধ্যে সরকার ও প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থাহীনতা বাড়ছে, তখন এমন নাটকীয় উপস্থাপনা জনদৃষ্টিকে অন্যদিকে সরানোর একটি দুর্বল প্রয়াস ছাড়া কিছুই নয়। এমনকি ধর্মীয় ও পবিত্র ঈদের মতো অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের এই প্রচেষ্টা জনবিরোধী বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, পুরো ঘটনাটি সাজানো হয়েছিল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের নেতৃত্বে, যার দায়িত্বে রয়েছেন শফিকুল ইসলাম। তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে এই ভিডিওটি পোস্ট করেন। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলপ্রয়োগ করে প্রচার করানো হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মন্তব্যটি জনসমক্ষে আনা ও গণমাধ্যমে প্রচার ছিল মূল লক্ষ্য।

এর আগে গত এপ্রিলে সুনামগঞ্জে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও বলেন, “মানুষ বলছে, আপনারা আরও পাঁচ বছর থাকেন।” একই মাসে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার দাবি করেন, “আমরা অনির্বাচিত- এই কথা কে বলল? আমাদের তো ছাত্ররা, জনতা নির্বাচন করেছে।”

এই ধারাবাহিক মন্তব্য ও ইভেন্টগুলো দেখে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এটি একটি সুপরিকল্পিত প্রচারণা যা বর্তমান অনির্বাচিত সরকারকে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় রাখার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে—ইউনূসের এমন নাটকের শেষ কোথায়? দেশবাসী এখন সেই উত্তরই খুঁজছে।

এদিকে সাধারণ জনগণের মাঝেও এসব ঘটনাকে ঘিরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে এমন আচরণ কখনোই প্রত্যাশিত নয়।

এর আগেও পদত্যাগ নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করেছেন ড. ইউনূস। তখন এ নিয়ে দেশের রাজনীতিতে শুরু হয় নতুন আলোচনা ও সমালোচনার ঢেউ। এটি কি ব্যক্তিগত হতাশা থেকে উৎসারিত, নাকি পূর্বপরিকল্পিত কোনো কৌশলের অংশ?

সূত্রগুলো বলছে, সরকার পরিচালনায় ড. ইউনূস যে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না, সেই অভিযোগেই পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন—এমনটি প্রচার করা হলেও প্রকৃত চিত্রটি ভিন্ন। মূলত, একটি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করাই যেখানে মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল, সেখানে তার সরকারের কর্মকাণ্ড সেই চরিত্র থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় একদিকে একটি নতুন রাজনৈতিক দল (এনসিপি) গঠন করা হয়েছে, অন্যদিকে গোয়েন্দা সংস্থার ব্যবহার করে পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টাও করা হয়েছে। এ ছাড়া ‘রাজনৈতিক সংস্কার’ নামে চলতে থাকা প্রক্রিয়াগুলো যতটা না ছিল স্বচ্ছ, তার চেয়ে বেশি ছিল সন্দেহজনক ও দীর্ঘসূত্রতায় ভরা। এতে সরকারের প্রতি জনআস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।

সবচেয়ে বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে—বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে একটি প্রতিবেশী দেশকে মানবিক বা রাজনৈতিক করিডোর দেওয়ার প্রস্তাব। এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো জনগণের ম্যান্ডেট কি একটি অনির্বাচিত, অন্তর্বর্তী সরকার রাখে? এমন প্রশ্নে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রশাসনের ভেতরের একাংশ থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী পর্যন্ত।

সেনাপ্রধান এ বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এ ধরনের স্পর্শকাতর রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র একটি নির্বাচিত সরকারই নিতে পারে।”

এই বক্তব্যের পরেই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু ড. ইউনূস সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে না নিয়ে কৌশলে তা পাশ কাটানোর চেষ্টা করেন। তিনি তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে একটি বৈঠকের পরপরই এনসিপির প্রধান নাহিদুল ইসলামকে দিয়ে পদত্যাগ প্রসঙ্গে বিবৃতি দেন—“ড. ইউনূস আর থাকতে চাচ্ছেন না।”

বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল একটি পূর্বপরিকল্পিত কৌশল, যার মাধ্যমে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের সঙ্গে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিকারী দলগুলোর যোগসূত্র তৈরি করার চেষ্টা করা হয়। তারও পরপরই রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ‘জাতীয় ঐক্য’র ডাক আসে, যেন ঘটনাপ্রবাহ এক নতুন মোড় নিতে থাকে।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় বন্দর ও মানবিক করিডোর নিয়েও জাতির সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছেন ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। গত মাসে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান বলেন, “এটি আমাদের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত। আরাকানের যে অবস্থা, তাতে করিডোরের কোনো প্রয়োজন নেই। করিডোর সৃষ্টি করে লোকজনের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কোনো প্রয়োজনীয়তা এখন নেই। যেটা প্রয়োজন আছে, সেটা হলো ত্রাণ সরবরাহ করা।

এর আগে খলিলুর বলেছিলেন, করিডর নয়, বাংলাদেশ আসলে প্যাসেস দিচ্ছে। তবে প্যাসেস ও করিডোর কী তা নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছুই বলেননি। সবশেষ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ত্রাণ চ্যানেল তৈরির কথা বলেন। এটাও কেমন হবে তাও বিস্তারিত জানাননি।

অথচ তার এসব বক্তব্যের আগে গত ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, রোহিঙ্গা সংকটে শর্তসাপেক্ষে করিডোর স্থাপন বিষয়ে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।

এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে খলিলুর ইনিয়ে-বিনিয়ে সরকার করিডোর নিয়ে মিথ্যাচার করছে। এদিকে সরকার বলে আসছিল, রোহিঙ্গাদের জন্য করিডোর স্থাপনের প্রস্তাব জাতিসংঘ দিয়েছিল। তবে সম্প্রতি সেই মিথ্যাচারও ফাঁস করেছেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। তিনি সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে রাখাইনে মানবিক সহায়তার জন্য করিডর প্রতিষ্ঠা নিয়ে যে আলোচনা, তার সঙ্গে যুক্ত নয় জাতিসংঘ।

তাহলে এখন প্রশ্ন কেন এই বিষয় নিয়ে এমন মিথাচার করছে ইউনূস গংয়েরা। সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। আর আমেরিকার এজেন্ডা বাস্তাবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না।

২০১৮ সালে মিয়ানমারে অং সান সু চির সরকার চীনের সঙ্গে কিয়াউকফিউ গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে চুক্তি করে। এই চুক্তির পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র রাখাইন রাজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনায় নামে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

পরবর্তী সময় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিধনযজ্ঞ, তাদের বাংলাদেশে স্থানান্তর এবং মানবিক করিডোর স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল সেই মার্কিন কৌশলের অংশ। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করছে বলেও দাবি উঠেছে।

সূত্র বলছে, ড. ইউনূসকে জাতিসংঘ মহাসচিব বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন। বিনিময়ে তাঁকে ব্যবহার করা হচ্ছে এক উচ্চপর্যায়ের প্রক্সি যুদ্ধে, যার মূল লক্ষ্য—বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি, মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সহযোগিতা এবং চীনের “বেল্ট অ্যান্ড রোড” পরিকল্পনা ব্যাহত করা।

বিশ্লেষকদের মতে,একদিকে রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনীর নির্বাচনের দাবির চাপ, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শক্তির সমীকরণে পরিচালিত একটি অনির্বাচিত সরকার—বাংলাদেশ এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রবেশ করছে। দেশে জনগণের ভোটের সরকার না আসা পর্যন্ত এই উত্তেজনা আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০