নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে অপরাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ স্পর্শকাতর পদে থাকা একাধিক ব্যক্তিবর্গ। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্যু করার চেষ্টা হচ্ছে এমন ধরনের বিস্ফোরক মন্তব্যসহ একাধিক সময়ে একাধিকবার গণমাধ্যমে অপতথ্য ছড়িয়েছেন তারা। জনগণকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন খোদ ড. ইউনূসের ম্যান্ডেট প্রাপ্তরা।

ড. ইউনূসকে ক্যু করার চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে ফুয়াদ গতকাল শুক্রবার বলেন, সেনাবাহিনীর সাথে, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের সাথে অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিমত হচ্ছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিভিন্ন ভাষায় রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা যে সকল ভাষায় রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন তা ক্যু’য়ের দিকে ইঙ্গিত করছে।
সেনাবাহিনীর মধ্যে কখনোই দেশপ্রেম ছিল না উল্লেখ করে শুক্রবার ফুয়াদ আরও বলেন, আপনাদের মিলিটারি অফিসাররা দিল্লিতে গিয়ে ঘোড়া উপহার নিয়ে এসেছেন। সেদিন তো আপনাদের মুখে কোন কথা শুনি নাই, সেদিন তো আপনারা করিডোর নিয়ে কথা ট্রানজিট নিয়ে কথা বলেননি। ২৪শে ১৪শ’ শহীদ হয়ে এই দেশকে নতুন করে স্বাধীন করেছে আর আপনারা হঠাৎ করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী হয়ে গেলেন। আপনাদের লজ্জা লাগলো না। আজকে দেশের মানুষকে বোঝাচ্ছেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের কি করা উচিত।
সেনাপ্রধান দিল্লির ছকে বাংলাদেশকে বিক্রির চক্রান্ত করেছে বলে শনিবার (২৪ মে) মন্তব্য করেন ফুয়াদ। তিনি বলেন, সেনাপ্রধান সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ব্যাপারে ম্যানডেটের প্রশ্ন করার উনি কে? আমরা বলতে চাই গণ-অভ্যুত্থানই ম্যান্ডেট। বর্তমান সরকার সর্বোচ্চ ম্যান্ডেটধারী। কারণ, দেশের সকল রাজনৈতিক দল এ সরকারকে ম্যান্ডেট দিয়েছে। সরকারের ম্যান্ডেট নাই এই বক্তব্য ইন্ডিয়ান ন্যারেটিভ।
এদিকে এবিপার্টির ফুয়াদের পাশাপাশি একাধিক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন এনসিপির নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ একাধিক সদস্যরা। তারা বলছেন- সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক হয়ে পড়ছে এবং সেনাবাহিনী ক্রমাগতভাবে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে।
রাজনীতিতে ‘হস্তক্ষেপের এখতিয়ার’ সেনাবাহিনীর নেই জানিয়ে চলতি বছরের ২১ মার্চ নাহিদ বলেন, নির্বাচনের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সরকার, জনগণ ও বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে। সেনাবাহিনী বা রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এ ধরনের চর্চা যেন বাংলাদেশে না হয়।
রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ রয়েছে মন্তব্য করে ২১ মার্চ হাসনাত বলেন, গত ৫ অগাস্টের পর সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন সময় দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। কিন্তু ১১ মার্চের সাক্ষাতের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। আমাদেরকে সেখানে আহ্বান জানান হয়েছিল। অপর প্রান্তে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন। সেনা বাহিনীর রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করি না। রাজনীতির ঘটনা প্রবাহ রাজনীতিবিদদের হাতে থাকা উচিত।
সেনাবাহিনী রাজনীতিতে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করছে জানিয়ে শুক্রবার (২৩ মে) এক ফেসবুক পোষ্ট করেছেন ড. ইউনূসের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। পোষ্টে তিনি লিখেন, সেনাবাহিনী রাজনীতিতে নাক গলাতে পারবে না। আজকের দুনিয়ায় কোনো সভ্য দেশের সেনাবাহিনী রাজনীতি করে না। তাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বক্তব্যে সেনাপ্রধান জুরিশডিকশনাল কারেক্টনেস রক্ষা করতে পারেননি। তবে সেনাবাহিনীকে প্রাপ্য সম্মান দেখাতে হবে, আস্থায় রাখতে হবে। সেনাবাহিনী প্রশ্নে হুট করে কিছু করা যাবে না, হঠকারী কিছু করা যাবে না। তেমনি, ইনক্লুসিভনেসের নাম করে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনও চাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব এবং আস্থার জায়গা- সেটা কেউ ভঙ্গ করবে না।