নিজস্ব প্রতিবেদক :
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ষড়যন্ত্রমূলক অভ্যুত্থানে জামায়াত-শিবির নেতৃত্বের সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ্যে আসার থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘মাইনাস টু’- এর গন্ধ পেয়েছিলেন অনেক রাজনীতি বিশ্লেষক। ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিগত ৯ মাসে অবশ্য বিষয়টিকে বারবার অবান্তর আশঙ্কা বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি রাজনীতির মাঠে বিএনপির সরব উপস্থিতিতেও মনে হচ্ছে, আগামী নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দল তারাই।
তবে, আরেকবার ‘মাইনাস টু’ ষড়যন্ত্র স্পষ্ট হয়েছে, যখন সরকারের স্পন্সরে এনসিপির ডাকা আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপির রাজনীতিও নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে জামায়াত-শিবিরের একটা পক্ষ। এরপর থেকে বিএনপির সঙ্গে ইউনূস সরকারের দূরত্বও অনেক বেড়ে গেছে। যেখানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, এবি পার্টি চাইলেই ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারছে, সেখানে গত সপ্তাহখানেক ধরে বারবার প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চেয়েও পাইনি বিএনপি।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মো.সালাউদ্দিন আহমেদ খোদ এ কথা জানিয়েছেন গতকাল শুক্রবার (২৩ মে)। এরই মধ্যে খবর, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আজ শনিবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় বৈঠক করতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর আমির। মূলত সরকারপ্রধানের পদত্যাগ ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে বলা হলেও রাজনৈতিক এ বৈঠকটি আগামী দিনের রাজনীতির কৌশল নির্ধারণ নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র বলছে, বৈঠকে বিএনপির বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত রাজনৈতিক আক্রমণাত্মক পরিকল্পনার চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে জামায়াত, শিবির, এনসিপি, এবি পার্টি ও ইউনুস সমর্থিত অন্যান্য দলসমূহকে একত্র করে একটি ‘মব কৌশল’-এর মাধ্যমে বিএনপি নিধন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে, যেমনটা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। ইতোমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা একত্রিত হতেও শুরু করেছে।
বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, এই পুরো ষড়যন্ত্রের পেছনে রয়েছে ড. ইউনূসের নিরব সমর্থন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থী বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঠেকাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টা — আসিফ নজরুল ও রিজওয়ানা হাসান — সরাসরি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
বিএনপিকে রাজনৈতিক মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে কূটকৌশল, মিথ্যা মামলা ও প্রশাসনিক হয়রানির পরিকল্পনা এগিয়ে চলছে তাদের নেতৃত্বে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো বিএনপিকে রাজনীতির পরিসর থেকে নিশ্চিহ্ন করে এনসিপিকে বিকল্প শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এই প্রক্রিয়ায় জামায়াত ও ইউনুসপন্থী দলগুলো একত্রে কাজ করছে। গতকাল সরকারপ্রধানের পদত্যাগের নাটকের মধ্য দিয়ে ফের রাজনৈতিক শক্তির পুনঃবিন্যাস ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানা যায়। এরইমধ্যে সরকার ঘনিষ্ঠ দলগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকেকে ইউনুসের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিপির জন্মের শুরু থেকেই বিএনপির প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। ইউনুস নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক বলয়কে টিকিয়ে রাখতে বিএনপির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপপ্রচার, মামলা, হামলা ও প্রশাসনিক দমনপীড়ন চলছে।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবির বিপরীতে জামায়াত ও এনসিপি একাট্টা। একদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টেছে, অন্যদিকে এখন বিএনপিকে রাজনৈতিক শত্রু বানিয়ে উভয় পক্ষই তাকে নির্মূল করার নীতিতে অটল রয়েছে।
অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি কেবল বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নয়, বরং দেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পর এবার বিএনপিও কোণঠাসা হয়ে গেলে গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে পারে দেশের গণতন্ত্র।