বাবার অবৈধ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সেনাবাহিনীকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে দুর্নীতিবাজ আসিফ

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার পিতার অবৈধ ঠিকাদারি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করছেন। শুধু আসিফই নন তাদের মদদপুষ্ট দল এনসিপির নেতারাও ঐক্যের নামে দেশের মানুষকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আর এর পেছনে রয়েছে হিজবুত তাহরীরের মতো উগ্রবাদী সংগঠনগুলো।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আসিফ লেখেন, ‘BAL (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ), North (সেনাবাহিনী) & Delhi (ভারত) জোটভুক্ত হয়ে যে কুমির ডেকে আনছেন তা আপনাদেরকেই খাবে। You’re not one of them—just co-opted temporarily. আমাদের না আছে মরার ভয় না আছে হারাবার কিছু। একমাত্র আফসোস, গণতান্ত্রিক রূপান্তর আর এদেশের মানুষের ভাগ্য কোনটাই ইতিবাচক পথে যাবে না আরকি। স্বপ্ন দেখে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টই বোধহয় এদেশের ভাগ্য।’

এই স্ট্যাটাস আসিফ এমন সময় দিলেন যখন সেনা সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে করিডোর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ জাতীয় প্রকল্প জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে এবং এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

সূত্র জানায়, অফিসার্স অ্যাড্রেস’-এ সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে সরাসরি করিডোর নিয়ে ‘সতর্কবার্তা’ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে আপসের প্রশ্নই আসে না। করিডোর বিষয়ে আমাদের অবস্থান দৃঢ় ও স্পষ্ট। এসময় সেনাপ্রধান ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে বলে জানান। সেইসঙ্গে মবের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

এরপরই বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মোড় নিতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে ঐক্যের ডাক দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই ডাক দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘জুলাইয়ের ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তির প্রতি আহ্বান—যে বিভাজনটা অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের মধ্যে এসেছিল, সেই বিভাজনকে দেশ ও জাতির স্বার্থে মিটিয়ে ফেলতে হবে। এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এবং পতিত ফ্যাসিবাদের নগ্ন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তির জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

একই সুরে কথা বলেন মাহফুজ আলম, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ফেসবুক পোস্টে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লেখেন, ‘দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য। আগেকার যে কোনো বক্তব্য ও শব্দচয়ন, যা বিভাজনমূলক ছিল- সেগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সরকারে আর একদিনও থাকলে অভ্যুত্থানের সকল শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করতে চাই।’

তথ্য উপদেষ্টা লেখেন, ‘পুরাতন বন্দোবস্তের বিভেদকামী স্লোগান ও তকমাবাজি, যা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে হত্যাযোগ্য করে তোলে, সেগুলো পরিহার করলেই আশা করি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।’

মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ ও আগ্রাসী। সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে। দেশপ্রেমিক জনগণ যারা জুলাই অভ্যুত্থানে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, তাদের সামনে দীর্ঘ পরীক্ষা। এ পরীক্ষা ঐক্যের এবং ধৈর্যের। এ পরীক্ষা উতরে যেতেই হবে।’

অবশ্য আগের কোন বক্তব্যের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন তা স্পষ্ট করেননি তথ্য উপদেষ্টা। তবে গত ১০ মে রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা নিয়ে কড়া মন্তব্য করেন। ‘দুটি কথা’ শিরোনামে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানান।

সেই পোস্টে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘৭১ এর প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে। পাকিস্তান এদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। পাকিস্তান সরকার অফিসিয়ালি ক্ষমা চাইলেও, সহযোগীরা আজও ক্ষমা চায়নি।’

জামায়েতের আমি শফিকুর রহমান নিজের ফেসবুকে আইডিতে লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল পক্ষকে মান, অভিমান ও ক্ষোভ একদিকে রেখে, জাতীয় স্বার্থে দূরদর্শী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ জানাই। যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করি। আল্লাহ তা’য়ালা এই জাতিকে সাহায্য করুন এবং সকল ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করুন। আমিন।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণকে উস্কে দিতে এ ধরনের ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন সরকার, এনসিপি ও জামায়াত আমির।

বাবার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ষড়যন্ত্রে আসিফ ; গত ২৩ এপ্রিল কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী জুলকারনাইন সায়ের বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে অভিযোগ উত্থাপন করেন যে, আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন একটি সরকারি ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়েছেন।

পোস্টে তিনি একটি লাইসেন্সের ছবি সংযুক্ত করে দাবি করেন, “স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (কুমিল্লা) নির্বাহী প্রকৌশলী ১৬ মার্চ এই লাইসেন্স ইস্যু করেন।”

সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের দাবি অনুসারে, বিষয়টি নিশ্চিত করতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুরুতে এ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পরে তিনি বিষয়টি যাচাই করে জানান, “লাইসেন্সটি সত্য, তবে এটি তার জ্ঞাতসারে হয়নি। স্থানীয় এক ঠিকাদারের প্ররোচনায় তার শিক্ষক পিতা লাইসেন্সটি নিয়েছেন এবং এখনও পর্যন্ত সেটি কোনো কাজে ব্যবহৃত হয়নি।”

তবে প্রশ্ন উঠছে, একজন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়ায় এই লাইসেন্স গ্রহণ প্রক্রিয়াটি কতটা স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ ছিল। যদিও এখনো সরাসরি কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি, বিশ্লেষকরা বলছেন—এটি একটি ‘নৈতিক সংঘাত’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
শুধু এবারই নয় এর আগেও সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করিয়ে দিয়েছিলেন আসিফ। তিনি জানিয়েছিলেন, সেনাপ্রধান বুকে পাথর চাপা দিয়ে ইউনূসকে মেনে নিয়েছিলেন।

কলকাঠি নাড়ছে হিজবুত তাহরীর; আসিফের সঙ্গে হিজবুত তাহরীরের সম্পর্কের খবর নতুন নয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী জুলকারনাইন তার ফেসবুক জানান, নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্তমান প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। আর এই এজাজকে নিয়োগ দিয়েছিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদই।

জুলকারনাইন বলেন, এজাজ ছাত্রজীবনে ইসলামি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন, ২০০২ সাল থেকে হিজবুত তাহরীরের সাথে জড়িত হন। এই সংগঠনের কাজ করতে গিয়ে কমপক্ষে দু’বার গ্রেপ্তার হন তিনি।

এই হিজবুত তাহরীরের প্রভাব ও সমর্থনে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ক্যু’র পরিকল্পনা চলছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষ করে, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের (এএফডি) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের নাম আলোচনায় রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ, করিডোর বাস্তবায়ন ও রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম করতে একটি অংশ দেশ ও সেনাবাহিনীকে সংঘর্ষের পথে ঠেলে দিচ্ছে। এর সঙ্গে জঙ্গি ও উগ্রবাদী শক্তির যোগসাজশ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক অশনি সংকেত।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১