সেনাবাহিনীতে সক্রিয় হিজবুত তাহরীর, ক্যু’র আশঙ্কা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

বিশেষ প্রতিবেদন

নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনায় সেনাবাহিনীর ৩ জনকে বরখাস্ত করে গ্রেফতার দেখানো হলেও সূত্র বলছে সেনাবাহিনীতে অস্থিরতা তৈরিতে কাজ করছে একাধিক গোষ্ঠী। সাম্প্রতিক সময়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে সেনা টহল বেড়েছে। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে একাধিক অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং গোপন বৈঠক নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে গোয়েন্দা মহলে। আসলে কি কি ঘটছে ঢাকা সেনানিবাসে?

সেনা সদস্য নাঈমুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের বিষয়টি সামনে এলেও তাদের সামনে রেখে সেনাবাহিনীতে ক্যু’র ছক কাটা হচ্ছিল। যার মূলে কাজ করছে মূলত সেনাবাহিনীতে কর্মরত হিজবুত তাহরীরের সদস্যরা, যার মদদে কাজ করছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

নির্ভর যোগ্য সূত্র বলছে, নির্বাচন স্থগিত রেখে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূসের অবস্থান আরও দীর্ঘতর করতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। আর দ্রুত নির্বাচন এবং দেশের সার্বভৌমত্বে সংকল্প বদ্ধ হওয়ায় ইউনূস গং’এর রোষানলে পড়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেনাপ্রধানকে সরিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে ইউনূস গং ব্যবহার করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী গোষ্ঠী হিজবুত তাহরীরকে।

সেনাবাহিনী থেকে যে সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টা নস্যাত করার কথা বলা হয়েছে, সেখানে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে কিছু ধর্মান্ধ সেনা কর্মকর্তার সাথে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সম্পৃক্ততার কথা। সেনা দপ্তর থেকে বলা হয়েছে হয়েছে, নাশকতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে বরখাস্ত সেনাসদস্য মো. নাইমুল ইসলাম ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাংলাদেশে জঙ্গী সংগঠনগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষনা করছেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিশ কেন্দ্রের নুর খান লিটন। তিনি জানান, হিযবুত তাহরীরের মতো সংগঠন যে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছিল সে সম্ভাবনা আগেও দেখা গিয়েছিল।

তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীর অভ্যুথান প্রচেষ্টার সাথে হিযবুত তাহরীর কতটা সম্পৃক্ত ছিল তা যারা তদন্ত করছেন তারা বলতে পারবেন। তবে হিযবুত তাহরীরের সাথে যোগাযোগের সন্দেহে এক বা একাধিক কর্মকর্তা ইতিপূর্বে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে জঙ্গী সংগঠনগুলোর এধরনের অপতৎপরতা প্রতিরোধ করার জন্য রাজনৈতিকভাবে একটি জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন রয়েছে।

সূত্র অনুযায়ী, সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে কাজ করছে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের (এএফডি) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছাত্র তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সেনাবাহিনীর আভ্যন্তরীণ অসন্তোষ মূলত শুরু হয় রাখাইনকে ‘মানবিক করিডোর’, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশীদের হস্তগত করা, বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বিদেশীদের আধিপত্যের সুযোগ করে দেওয়া এবং ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে পিলখান হত্যাকাণ্ডের আবার বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে। চার ঘটনায় ড. ইউনূসের সাথে সেনাপ্রধানের একাধিক বৈঠক হয়। যদিও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনা প্রধানের কোন আলোচনাই আমলে নেন নি ড. ইউনূস।

গোয়েন্দা সংস্থার হস্তগত একটি নথি, যার সত্যতা যাচাই করা যায়নি, তাতে দেখা গেছে একটি গোষ্ঠী সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় স্বার্থে ব্যবস্থা গ্রহণের’ অঙ্গীকার করেছে। নথিতে লেখা ছিল ‘রাষ্ট্র যখন বিপন্ন, তখন ব্যারাকই শেষ আস্থার আশ্রয়।’

আভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর কিছু মধ্য ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এবং একটি সম্ভাব্য ক্যু’র প্রস্তুতির আভাস মিলেছে। এই কৌশলী ও নীরব প্রস্তুতির লক্ষ্য সেনাপ্রধানকে সরিয়ে দিয়ে বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়া।

দেশের বিভিন্ন সেনা ঘাঁটিতে অনিয়মিত ড্রিল চলছে বলেও জানা গেছে। সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত দুই সপ্তাহে অন্তত তিনটি ব্যাটালিয়নের তৎপরতা পূর্বঘোষিত রুটিন থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং কিছু ইউনিট নির্ধারিত ঘাঁটির বাইরে ‘মহড়া’ চালিয়েছে যা প্রথাগত নয়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অঘোষিতভাবে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। যদিও নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয় নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি পর্যন্ত কোন মন্তব্য বা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে। বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, ক্যু কার্যকর করতেই বিদেশগমন সীমিত করা হয়েছে।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এই ঘটনাগুলোকে ‘রেড অ্যালার্ট’ হিসেবে বিবেচনা করছে। তারা বলছে, অনিয়মিত ড্রিল, সেনা সদর দফতরসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল জোরদার এবং বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি ‘চরম নিরাপত্তা হুমকি’।

যদিও এখন পর্যন্ত সরকার বা সেনাবাহিনী পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসেনি। তবে ভেতরের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে সেনাপ্রধান সম্প্রতি ঘন ঘন বিভিন্ন ঘাঁটিতে যাচ্ছেন এবং বেশ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে তলব করেছেন।

প্রসঙ্গত, সেনাবাহিনী থেকে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে সেনা সদস্য মো. নাঈমুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের বরখাস্ত করে শনিবার (১৭ মে) তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, রোববার (১৮ মে) ঢাকা সেনানিবাসের প্রবেশপথে বিক্ষোভ সমাবেশের নামে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন উসকানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন তারা।

এদিকে, একটি নির্ভর যোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান গত ১১ মে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের (এএফডি) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসানকে অপসারণের চেষ্টা করেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস সরকারি প্রজ্ঞাপন আটকে রেখেছেন।

অন্যদিকে, মানবিক করিডোরের বিরোধিতা করায় পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়েছে। জসীম উদ্দিন এই ইস্যুতে সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ অংশের সঙ্গে একমত ছিলেন। তবে তাকে একটি ক্লাবের বিল সংক্রান্ত অজুহাতে অপসারণ করা হয়। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, যিনি মার্কিন নাগরিক, এই করিডোরের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। সূত্র জানায়, ইউনূস ও খলিলুর রহমান, জসীম উদ্দিনের অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১