জুয়েল রাজ:
আমার ইনবক্স ভরে উঠেছে , বাংলাদেশে লুটপাট , ভাংচুর , আগুনের লেলিহান শিখা আর রক্তাক্ত ভয়াবহ লাশের ছবিতে। নারীদের ধর্ষণ ও তুলে নিয়ে যাওয়ার নানা আর্তনাদে। লাশ ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে রাস্তার মোড়ে ,লাইট পোস্টে , গাছের ডালে।
সেই লাশের মিছিলে,সেখানে হিন্দু আছে , মুসলিম আছে , নেতা আছে কর্মী আছে , পুলিশ আছে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ আছ।মানুষবাড়ি ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে … রোহিঙ্গাদের মত ভীড় করেছে ভারতের সীমান্তে।
বিজয় উৎসবের রং আর রক্তের রং আগুনের রং সব রঙই এক সো এনজয় ভ্রাতা এবং ভগ্নিগণ।
অন্যপাশে জামায়াত ইসলাম বিএনপির ভাই ব্রাদাররা মন্দির পাহাড়া দেয়ার ছবি।
আমি কোনটা বিশ্বাস করব!!
বিপ্লবী সমন্বয়ক গণ নাকী সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন এসব না করতে। মহানায়ক আসিফ নজরুল বলেছেন এইসব ছোট ক্ষুব্ধ মানুষ এইসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে টাইপের কিছু। আগের সরকার এই অবস্থার জন্য দায়ী , তার এই জায়গায় দে্শকে এনে দাঁড় করিয়ে গেছে।
কিন্ত আমার কোন অনুভূতিই কাজ করছে না।
আমি তো মানসিক ভাবে প্রস্তুত হয়েই ছিলাম।
ছাত্র জনতার বিজয়ের পর কি ঘটবে তা আগেই জানতাম।
দেশের কোন সরকার নাই , আইন নাই , প্রশাসন নাই।
কাউকে নিরাপত্তা দেয়ার কোন বালাই নেই , দায় নেই , আর্মির কাছে থেকে পুলিশ কে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলছে ছাত্রজনতা।
তাও শুনলাম হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানায় হিন্দু অফিসার এর নাম ধরে নিয়ে গেছে।
বলেছে সন্তোষ কে আমাদের হাতে দিয়ে দেন , বাকীদের নিয়ে যান! আর্মি তাই করেছে।
কিন্ত আদালতের আদেশ ছাড়াই জেল থেকে আসামীরা মুক্ত হচ্ছে, প্রশাসনে রদবদল হচ্ছে , এই গায়েবী নির্দেশ কোথা থেকে আসছে তাহলে?? যে সব ভীত বা আপনাদের বাসায় ,দালাল, দূর্নীতিগ্রস্ত, খুনী নানা উপাধী দিচ্ছেন তাদের এয়ারপোর্টে ,নানা বর্ডারে আবার ঠিকই আটক করা হচ্ছে ,পালাতে দেয়া হচ্ছে না। এদের নামে কিন্ত এখনো কোন মামলা বা কিছুই নেই। এক পাক্ষিক অভিযোগে অভিযুক্ত মাত্র। আইনী ভাবে ও অভিযুক্ত নয়।
মানে কি? এদের বিচারের দায়িত্ব দিয়ে দেয়া হচ্ছে সেই তথাকথিত বিপ্লবী জনতার হাতে , যাতে করে এই সুযোগে এদের শেষ করে দেয়া হয়।
ধীরে বৎস! উতলা হওয়ার দরকার নাই।
একটু ধৈর্য ধরুণ। সব ঠিক হয়ে যাবে।
আপনাদের তথাকথিত নতুন স্বাধীন দেশে, এই যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেন, বিপ্লবী সরকার বলেন , সেনা সরকার বলেন, যে নামেই ডাকেন না কেন। নতুন প্রজন্মের বীর সেনা কোমলমতী সরকার বলেন , দায়িত্ব নিতে গড়িমসি বা সময় ক্ষেপণ, একটি উপলক্ষ ও দায়মুক্তির নাট্য মহড়া মাত্র।
এই সময় ক্ষেপনের মধ্য দিয়ে , মুক্তিযুদ্ধ , বঙ্গবন্ধু , আওয়ামী লীগ এবং ভিন্নধর্মী ,এই ভূখণ্ড থেকে নিশ্চিহ্ন করার শেষ সুযোগ টা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
পরে যাতে করে এর জন্য জাতীয় আন্তর্জাতিক ভাবে কোন দায় নিতে না হয়।
অভ্যুত্থান এর নামে চালিয়ে দেয়া যাবে। এই ক্ষুব্ধ জনতার নামে হত্যাযজ্ঞ শেষ হলে তবেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।
এতোএবো যারা যেভাবেই পারেন নিজের জান বাঁচাতে পারবেন তারা ঠিকে যাবেন। বাকীরা আওয়ামী লীগের শোক প্রস্তাবে ১ মিনিট নীরবতায় উৎসর্গ হয়ে যাবেন। সরি টু সে।
সীমান্তের জনস্রোত ও থামানোর কোন পথ জানা নেই। ভারত ও যে সহজে দরজা খুলে দিবে সেটি ভাবা ও ভুল হবে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু এখন রোহিঙ্গার মত আপদ। ভারত সেই আপদ নেবে না।
যে শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার সাথে আলোচনা হয়নি, সেই শহীদের রক্তের দাগ শুকায় নাই , বিএনপি সেই শহীদের রক্তের সাথে শত পুলিশ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু , এবং আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের রক্তে সেই পরিমান আর ও বেড়েছে। সেই রক্তে পা মাড়িয়েই বিশাল সমাবেশ করেছে বিএনপি।
আর আশার কথা হচ্ছে , এই যে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন অভিযান চলছে। বঙ্গবন্ধুকে অপমানিত নির্বাসিত করার আপ্রাণ চেষ্ঠা করা হচ্ছে। সেটি একদিন থেকে ভাল।
কারণ যারা মুক্তিযুদ্ধ কে লালন করেন। জীবনে আওয়ামী লীগ করেন নাই। কোনদিন ধারে কাছে ও যান নাই , আমার মত কিছুই না মার্কা একটা মানুষ এই দুইদিনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েকশত ফোন কল, পেয়েছি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেঞ্জারের বার্তা তো বাদই দিলাম।
বঙ্গবন্ধুকে অপমানের দৃশ্য ,৩২ ধানমণ্ডির শ্মশান হয়ে যাওয়ার দৃশ্য তাদেরকে কাঁদিয়েছে। তাদের কান্না ,আমি শুনেছি। বঙ্গবন্ধু , শেখ হাসিনা নিয়ে তরুণ প্রজন্মের যে আত্মবিশ্বাস । কোন শক্তির ক্ষমতা নেই,
এই আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিবে।
আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু কে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ ছিলনা , এখনো নেই আগামীতে ও হবে না। আজকে যারা রঙ বদলাচ্ছেন তারা যুগে যুগেই এই প্রতিযোগীতায় থাকবে।
আওয়ামী লীগ কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ নয়। আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম। ভয়ের কিছু নেই। যে দেশে যে নেতার ডাকে ৩০ লাখ লোক প্রাণ দিতে পারে সেই দেশে কয়েক হাজার নেতাকর্মী হত্যার মধ্য দিয়ে সেই নেতাকে এই ভূখণ্ড থেকে ভাস্কর্য ভেঙে আর ছবি ছিড়ে কিভাবে মুছে ফেলবে!!