অনলাইন ডেস্ক-
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার ১০৮টি ইউনিট কমিটির মধ্যে ২৭টি ইউনিট কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে এসব কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে সংঘাত, সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যর্থতার জন্য এসব ইউনিট কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে। সূত্রগুলো বলছে, রাতে মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের ঢাকা উত্তরের নেতাদের একটি বৈঠক হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে এই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়।
দুই নেতার তর্ক, ধাক্কাধাক্কি
অন্যদিকে দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে একটি সমন্বয় সভা করেন দলটির নেতারা। সেই সভার পর কয়েকজন নেতাকে নিয়ে ওই কার্যালয়ে নিজ কক্ষে বসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সে সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংঘাত, সহিংসতা প্রতিরোধে দলের ব্যর্থতা নিয়ে তর্কে জড়ান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান। তাঁদের তর্ক ধাক্কাধাক্কি পর্যন্ত গড়ায়। এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা ওই দুই নেতাকে নিবৃত্ত করেন বলে দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নানা দুর্বলতা বেরিয়ে এসেছে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। গত মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং দলীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ সভায়ও এ ব্যাপারে আলোচনা হয়। সেই বৈঠকে দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা সমাধানের বিষয়ে নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
যদি ঘুমিয়ে থাকি, ঘরে ঘরে ঢুকে মেরে ফেলবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার পর বৃহস্পতিবার রংপুর ও রাজশাহী গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রংপুরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যালয় যখন ভাঙচুর করা হলো, তখন নেতা-কর্মীদের তো ঘুরে দাঁড়াতে হতো। তাঁরা যে ঘুরে দাঁড়াতে পারলেন না, এটা নিয়ে তাঁর কষ্ট লাগছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন।
ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেতু ভবন, ত্রাণ অধিদপ্তর, বিটিভি, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নানা জায়গা পুড়িয়ে দেওয়া হলো। এর সঙ্গে আন্দোলনের সম্পর্ক কী, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। নরসিংদীর কারাগারে হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাদের নিয়ে গেল? যারা জঙ্গি। ৯ জন জঙ্গি আসামি সেখানে ছিল।’
একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমার কষ্ট লাগে, আপনাদের পার্টি অফিসটা যখন ভাঙচুর করল। আপনাদের তো ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমরা পকেটে হাত দিয়ে যদি ঘুমিয়ে থাকি, তাহলে আমাদের ঘরে ঘরে ঢুকে মেরে ফেলবে। এটারই প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি বিএনপি-জামায়াত, জঙ্গি—সব একত্র হয়ে গেছে।’ যারা সম্পদ নষ্ট করেছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সুত্র- প্রথম আলো