জুয়েল রাজ:
যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দীর্ঘ ১৪ বছরের কনজারভেটিভ পার্টির শাসনের শোচনীয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটেছে লেবার পার্টির । ৩২৬ টি আসন লাভ করলেই একক সরকার গঠন করা যায়, সেখানে ৪১০ টি আসন লাভ করেছে লেবার পার্টি।
হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের বিপরীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ২০২৪ সালের নির্বাচনে ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যেখানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ৯ জন নারী প্রার্থী সহ মোট ৩৪ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন।
গত নির্বাচনে বিজয়ী ৪ নারী, রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক , রূপা হক, আফসানা বেগম এবারও বিজয়ী হয়েছেন
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম ব্রিটিশ এমপি রোশনারা আলী যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে টানা পঞ্চম মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন. তবে এবার অল্প ব্যবধানে জিতেছেন তিনি।
৪৯ বছর বয়সী রোশনারা আলী,বটাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে পঞ্চমবারের মতো ১৫,৮৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন রোশনারা আলী. তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্রিটিশ বাংলাদেশি আজমল মাশরুর পেয়েছেন ১৪,২০৭ ভোট. শেষ পর্যন্ত আজমল মাশরুর সব বিরোধী দলের ভোট টেনে আনতে সক্ষম হন এবং তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে চমক দেখান। মূলত ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে বাঙালি অধ্যুষিত এই আসনে এবার চাপে পরেন রোশনারা আলী। তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিভিন্ন প্রপাগাণ্ডা ছড়ানোর অভিযোগ ও তুলেছেন তিনি। তবু ও শেষ বিজয়ের হাসি হাসলেন রোশনারা আলী। নির্বাচনে , আরেক বাংলাদেশি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী রাবিনা খান ৪,৭৭৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন. এ আসনের অপর দুই স্বতন্ত্র বাংলাদেশি প্রার্থী স্যাম উদ্দিন ৩২৫ ও মোঃ সুমন আহমেদ ৩১৫ ভোট পেয়েছেন.
বঙ্গবন্ধুর নাতিন ও শেখ রেহানার মেয়ে , লেবার পার্টির প্রার্থী টিউলিপ সিদ্দিক টানা চতুর্থবারের মতো লন্ডনের হ্যামস্টেড, কিলবার্ন ও হাইগেট আসন থেকে জয়ী হয়েছেন. তিনি এই আসনে ২৪৩৪২ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামস পেয়েছেন মাত্র ৮৪৬২ ভোট। ৪১ বছর বয়সী টিউলিপকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা লেবার পার্টির মধ্যে নতুন প্রজন্মের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিবিদদের একজন হিসাবে দেখেন. ২০১৫ সালের নির্বাচনে, টিউলিপ একটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে প্রথমবারের মতো লেবার পার্টির অ-নিরাপদ আসনে জয়লাভ করেন। এবং এবারের নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়ী হয়েছেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ১৫ হাজারের সামান্য বেশী ভোটে জিতেছিলেন টিউলিপ আর আবার সেই একই আসনে ১৫ হাজারের বেশী ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।
ডাঃ. রুপা হক টানা চতুর্থবারের মতো লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল এবং অ্যাক্টন আসনে লেবার পার্টির মনোনয়নে ২২৩৪০ ভোট পেয়ে জিতেছেন. তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির জেমস উইন্ডসর-ক্লাইভ পেয়েছেন ৮৩৪৫ ভোট,
৫২ বছর বয়সী ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত রাজনীতিতে প্রবেশের আগে সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন. শিল্পী ও লেখক সর্বশেষ কিংস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত ছিলেন.
বাংলাদেশের মোহাম্মদ হক ও রোশন আরা হকের তিন কন্যার মধ্যে রূপা হক বড়. তার বাবা-মা ১৯৭০সালে ব্রিটেনে আসেন. তার বাবার বাড়ি পাবনা শহরের কুঠিপাড়ায়. রূপা হক তার সহজ-সরল এবং বিনয়ী আচরণের জন্য তার নির্বাচনী এলাকার ভিতরে এবং বাইরে উভয়ই ভাল পছন্দ করেন।
লেবার পার্টির আপসানা বেগম বাংলাদেশি জনবহুল পপলার ও লাইম হাউস থেকে ১৮ হাজার ৫৩৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জয়ী হয়েছেন. তিনি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন.
অপসানার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রিন পার্টির নাথালি বেনিফিট পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৭৫ ভোট; কনজারভেটিভ পার্টির ফ্রেডি ডাউনিং পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৩৮ ভোট; আর স্বতন্ত্র প্রার্থী অপসানার সাবেক স্বামী এহতেশামুল হক পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৫৪ ভোট.
অপসানা বেগম গতবার পূর্ব লন্ডন আসনে স্থানীয় লেবার পার্টির বাংলাদেশি বংশধরদের বিরোধিতার মুখে লেবার মনোনয়ন ও নির্বাচনী লড়াইয়ে জয়ী হন.
আফসানা বলেন, আমি শ্যাডওয়েল, টাওয়ার হ্যামলেটসে জন্মগ্রহণ করেছি এবং বড় হয়েছি. তার বাবার বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে, আফসানার বাবা মনির উদ্দিন ও টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর ছিলেন ।