শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ব্রিটিশ মন্ত্রীদের প্রশংসা
ব্রিকলেন নিউজ:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতার ৫২তম বার্ষিকী ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য র্মযাদা ও ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে উদযাপন করেছে।
এ উপলক্ষে লন্ডনের কেনজিংটন টাউন হলে এক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তি ও ডিজিটাল অর্থনীতি এবং লন্ডন বিষয়ক মন্ত্রী পল স্কালি এমপি এবং ডিপার্টমেন্ট অব লেবেলিং-আপ, হাউজিং ও কমিউনিটি বিষয়ক মন্ত্রী ফেলিসিটি বুকান এমপি সম্মানিত অতিথি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বক্তব্যে রাখেন।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জাতির পিতার ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ ২৪ বছরের নির্ভীক, বিচক্ষণ ও ঐন্দ্রিজালিক নেতৃত্ব ছাড়া বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বিশ্বে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতো না।”
হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, “৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার আদর্শই অনুসরণ করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।” এপ্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের সমর্থন অব্যাহত রাখার আহ্বান।
হাইকমশিনার ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে যুক্তরাজ্যে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সফর এবং ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ-এর সাথে তাঁর আনুষ্ঠানিক বৈঠকই বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের বিগত ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করে আগামিতে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জলবায়ূ, প্রতিরক্ষা-নিরাপত্তা ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সহযোগিতার বিষয়ে আরো গভীর হবে বলে দৃঢ় আশা ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রদূত ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্তরাজ্য সরকার ও জনগণ এবং যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের অসাধারণ অবদানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
ব্রিটিশ মন্ত্রী পল স্কালি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২তম বার্ষিকী ও জাতীয় দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের জনগণ ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং মায়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও নিরাপত্তা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য মানবিকতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণ শরণার্থী হিসেবে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, সেই অভিজ্ঞতা, মমতা ও মানবিকতাই আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের জনগণ রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রদর্শন করছেন।” পল স্কালি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক সহযোগিতার সম্পর্ক ভবিষ্যতে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের ৫০ বছরের সূদীর্ঘ কূটনৈতিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী ফেলিসিটি বুকান এমপি বলেন, “গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার বিষয়ে দুইদেশের মধ্যে গভীর আদর্শিক মিল রয়েছে। বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার ক্ষেত্রেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।” তিনি যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ আরো বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি তাঁর বক্তব্যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও নিরাপত্তা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতার প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে হামদ ও নাথ পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পী রাশিদা খান বানু এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোর শিল্পী শরিফ আহমেদ, মোহনা ও আয়ান মোহাম্মেদ। এতে টাওয়ার হ্যামলেটসের স্পীকার, লন্ডনের বিভিন্ন এলাকার কাউন্সিলর ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।
সকালে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম দূতাবাসে কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের র্কমসূচির উদ্বোধন করেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহিদ সদস্যদের ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী শহিদদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশের শান্তি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়।