বাঙালিদের আগ্রহ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল
জুয়েল রাজঃ
যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। ২০২১ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ব্রিটেনের ৪৬.৭ মিলিয়ন ভোটার, সারাদেশে ৩৫ হাজার ৫০০ ভোট কেন্দ্রে আজ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। স্থানীয় পর্যায়ে সব ধরণের উন্নয়ন ও পরিসেবা দেয়া স্থানীয় কাউন্সিলের দায়িত্ব । সংসদ সদস্যরা শুধু নীতি নির্ধারন ও আইন প্রণয়ণের কাজটি করে থাকেন।
পুরো ব্রিটেনে জুড়ে প্রায় শতাধিক বাঙালি কাউন্সিলর হিসাবে এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সংখ্যার দিক থেকে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস, নিউহ্যাম, রেডব্রীজ ও বার্কিং কাউন্সিলে সর্বাধিক বাঙালি কাউন্সিলর হিসাবে অংশ নিচ্ছেন।
সারা দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ও পুরো যুক্তরাজ্যের বাঙালিদের দৃষ্টি লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল কে ঘিরে।
২ লাখ ২০ হাজার মানুষের বাস টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে যার ৩২ শতাংশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। এবং দুই শতাংশ আছেন সোমালিয়ান বংশোদ্ভূত এবং ধর্মীয় পরিচয়ে প্রায় শতভাগ ইসলাম ধর্মালম্বী।
স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে রাজনীতি মূলত বাঙালিরাই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায়। তাই সংখ্যালঘু অভিবাসী এবং মুসলমান হিসাবে এক ধরণে ঐক্য আছে।
এই স্থানীয় নির্বাচনে মূলত প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠে এবং সংসদ নির্বাচনে তা ভূমিকা রাখে।
কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচনে ও দুই ধরণের মেয়রাল নির্বাচন হয়ে থাকে। একটি কাউন্সিলর গণ নির্বাচত করে থাকেন, যার কোন নির্বাহী ক্ষমতা থাকে না, অলংকারিক পদ। অন্যটি সরসরি ভোটার গণ নির্বাচিত করে থাকেন, যাদের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা থাকে। স্থানীয় বাজেট প্রণয়ন থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন সবই মেয়র করে থাকেন। ব্রিটেনে এমন নির্বাহী মেয়রের সংখ্যা মাত্র ১৫ টি।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে ২০১০ সালে এই নির্বাহী মেয়র নির্বাচন শুরু হয়। এবং সেই সময় বাঙালি বংশোদ্ভূত লুৎফুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রথম বাংলাদেশি এবং মুসলমান হিসাবে তিনি এক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছিলেন।
কিন্ত ২০১৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ সহ তহবিল বরাদ্ধে নানা অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এবং আদালতের রায়ে তিনি ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন। ৫ বছরের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হন। রাজিনীতিতে নিষিদ্ধ থাকলে ও তাঁর অনুসারীদের দুই নির্বাচনে প্রার্থী করেন। কিন্ত কেউই আর জয়ের মুখ দেখেন নি। দীর্ঘ ৭ বছর পর টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র নির্বাচনে স্থানীয় রাজনৈতিক দল আসপায়ার থেকে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন লুৎফুর রহমান।
মেয়র পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্ধন্ধিতা করলেও মূল প্রতিযোগিতায় আছেন ৩ জন প্রার্থী, বর্তমান লেবার দলীয় মেয়র জন বিগস, সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমান ও লিবডেম থেকে কাউন্সিলর রাবিনা খান।
তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থায় সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান মেয়র জন বিগস। কারণ রাজনৈতিক ভাবেই টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার দলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনে লেবার এইখানে খুব ভালো করে সব সময়। স্থানীয় দুই এম পি রোশনারা আলী এবং আপসানা বেগম লেবার থেকেই নির্বাচিত হয়েছেন।এবং বাঙালিদের এবং সোমালিয়ানদের বিশাল অংশ লেবার পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই স্থানীয় শেতাঙ্গ ভোটার ও অভিবাসী সংখ্যালঘু ভোটারদের মিলিয়ে এগিয়ে আছেন জন বিগস।
দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমান। স্থানীয় বাঙালি এবং ধর্মীয় নেতারা অনেকেই তাঁর সাথে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। কিন্ত আগেত সেই জনপ্রিয়তা আর দৃশ্যমান নয়। বরং তাঁর বিরুদ্ধে পূ্র্ববর্তী মামলা, ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়গুলোকে পুঁজি করে প্রচারণা চালাচ্ছে লেবার পার্টি এবং লিবডেম। তিনি যে বাঙালি এবং সোমালিয়ান ভোট ব্যাংক নিয়ে দুইবার বিজয়ী হয়েছিলেন, সেখানে ভাগ বসিয়েছেন এবার লিবডেমের রাবিনা খান।
রাবিনা খান তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। এর আগে দুইবার তিনি মেয়র হিসাবে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা আছে। এইবার প্রথম মূলধারার রাজিনৈতিক দল লিবডেম থেকে নির্বাচন করছেন তিনি। তাই মানুষ যদি পরিবর্তন চায় তাহলে ভাগ্য খুলে যেতে পারে রাবিনা খানের। নারী ভোটারগণ ও একটা ব্যবধান গড়ার সম্ভাবনা আছেন।
উল্লেখ্য টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে প্রায় ৬০ হাজার এর মতো বাঙালি ভোটার আছেন। এই ভোট ভাগাভাগি করবেন লুৎফুর রহমান, রাবিনা খান এবং জন বিগস। যিনি বিজয়ী হবেন, বাকী ভোট শেতাঙ্গ ব্রিটিশ নাগরিকদের কাছ থেকে আনতে হবে। নিঃশব্দেই অতিবাহিত হচ্ছে ভোটের দিন, রাস্তাঘাটে বিন্দুমাত্র কোন চিহ্ন নেই।
সকাল ৮ টা থেকে শুরু হওয়া ভোট চলবে রাত ১০ টা পর্যন্ত। ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামীকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত।