ব্রিকলেন নিউজ –
বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বিভাজন ও ক্ষমতাত অপব্যবহারের অভিযোগে যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার আবিদা ইসলাম ডেপুটি হাই কমিশনার ও হেড অব চ্যান্সরি নজরুল ইসলামকে প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছে লন্ডনের বাংলাদেশে সেন্টার।গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ সেন্টারে বর্তমান কমিটির সাথে হাই কমিশনার ও অপর কর্মকর্তাদের বাক বিতন্ডা সহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অবতারণা হয়।
পূর্ব লন্ডনের গ্রান্ড রসই রেস্টুরেন্টে গত ২০ নভেম্বর বাংলাদেশ সেন্টারের কাউন্সিল অব ম্যানেজমেন্ট কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম ও ডেপুটি হাইকমিশনার নজরুল ইসলাম এবং মিনিস্টার (হেড অব চ্যান্সারি) এম কে শাহরিয়ার মোশাররফের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ১৭ নভেম্বর হাইকমিশনারের প্যাডে আহ্বান করা ওই সভায় কাউন্সিলের অনেকে নোটিশ না পেয়ে বাজেয়াপ্ত বিজ্ঞপ্তি ও পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণে সেন্টারে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
কমিটির বক্তব্য অনুযায়ী, ৪ নভেম্বর ইমেইলে পাঠানো নোটিশ সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজনকে না পাঠিয়ে হাইকমিশন বাছাইকৃত কয়েকজনকে আমন্ত্রণ জানায়। বিষয়টি জানার পরে ১৩ নভেম্বর কাগজপত্রের মাধ্যমে এবং ১৪ নভেম্বর ইমেইলে সভা বাতিলের অনুরোধ জানানো হলেও হাইকমিশনার কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় সদস্যরা ১৭ নভেম্বর সেন্টারে উপস্থিত হন। সাধারণ সম্পাদক সভা বাতিলের অনুরোধ করলে হাইকমিশনার তা শুনতে অস্বীকৃতি জানিয়ে উত্তেজিত প্রতিক্রিয়া দেখান এবং সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধারণ নিষেধ করেন বলে অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হাইকমিশনার উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে “Do you know who I am? I am the chair.” বলেন এবং পরে সেন্টার ত্যাগ করেন। এ সময় ডেপুটি হাইকমিশনার নজরুল ইসলাম সদস্যদের উদ্দেশ্যে “You are in serious trouble… বাংলাদেশ আসো দেখে নিবো” বলে হুমকি দেন—যা কমিটি কর্তৃক উদ্বেগজনক ও উস্কানিমূলক আখ্যা দেয়া হয়েছে। পরে পুলিশ প্রটেকশনে হাইকমিশনার পুনরায় সেন্টারে আসেন, তৎপরকালে সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে “আপনার সাঙ্গোপাঙ্গদের সামলান” বলেন, যা শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং আপত্তিকর বলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি তোলেন।
কমিটি ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫–এর একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের ঘটনাও স্মরণ করিয়ে দেয় যেখানে মিনিস্টার হেড অব চ্যান্সারি এমকে শাহরিয়ার মোশাররফ “আপনাদের গাজাখুরি বক্তব্য আর শুনতে চাই না” বলে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন। ৩০ সেপ্টেম্বর সেই কর্মকর্তা কর্তৃক ক্ষমা চাওয়ার জন্য তারা ইমেইল করার পরও হাইকমিশনার কোনো জবাব দেননি বলে অভিযোগ করা হয়।
কমিটির দৃষ্টিতে হাইকমিশনার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করেছেন, কমিউনিটি বিভক্তি সৃষ্টি করেছেন এবং নিরপেক্ষতার নীতি ভঙ্গ করেছেন। তাই তাঁকে, ডেপুটি হাইকমিশনার নজরুল ইসলাম ও মিনিস্টার হেড অব চ্যান্সারিকে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সেন্টারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও সম্প্রতি সম্পন্ন পুনর্নির্মাণ-সংস্কারের কথাও তুলে ধরা হয়। দেলোয়ার হোসেন বলেন, সেন্টার ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল এবং ১৯৮৩ সালে সরকারি অনুদানে ভবন ক্রয় করা হয়েছিল। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পুনরায় উদ্বোধিত এ সেন্টার এখন একটি নিবন্ধিত দাতব্য সংস্থা হিসেবে কমিউনিটির ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।
দেলোয়ার হোসেন শেষভাবে বলেন, সংবিধান যুগোপযোগীকরণসহ আগামী সময়ে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সময়োপযোগীভাবে গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে এবং কমিটি সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সেন্টারের স্বার্থে কাজ করে যাবে। সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন উপস্থিত ছিলেন এবং সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
বাংলাদেশ সেন্টার লন্ডনের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ভাইস চেয়ারম্যান তফজ্জুল হোসেন, চীফ ট্রেজারার শিব্বির আহমদ , যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আহমদ রাজু। এছাড়াও কাউন্সিল অব ম্যানেজমেন্ট কমিটির কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান গুলনাহার খান, ভাইস চেয়ারম্যান মামুন রশীদ,ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক জিলু, কমিটির সদস্য শাহানুর খান, ময়নুল হক, আব্দুল হান্নান, জাকির হোসেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মিডিয়া উপ-কমিটির আহবায়ক আলী বেবুল।



