নিজস্ব প্রতিবেদক
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশে ফেরাতে কার্যত ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যদিও দীর্ঘ সময় ধরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থার আশ্বাস দিলেও শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপার্সনকে ফেরাতে কোন প্রস্তুতি নেয়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমনকি বিএনপি চেয়ারপার্সনকে বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে শেষ মূহুর্তে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের হস্তক্ষেপে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সই দেশে ফিরছেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে অন্তর্বর্তী সকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দফতরে লিখিত আবেদনের পাশাপাশি স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে একাধিকবার মৌখিক আবেদন জানিয়েছি। তারা প্রতিনিয়তই আশ্বাস দিয়ে এসেছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে ম্যাডামকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তারা এটাও জানিয়েছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের প্রস্তুতি না কি সম্পন্ন। কিন্তু শেষ মূহুর্তে এসে তারা বলছে, কোনো বিশেষ ফ্লাইট না, ম্যাডামকে তারা বাংলাদেশ বিমানে করে নিয়ে আসবে।

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার রাজপরিবারের সঙ্গে জিয়া পরিবারের দীর্ঘদিনের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এরই প্রতিফলন হিসেবে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গমনকালে কাতারের আমির বেগম খালেদা জিয়াকে রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়। সেটিতে করেই তিনি লন্ডন যান। চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার উদ্যোগ নিলেই বাঁধে বিপত্তি। খালেদা জিয়ার ফেরার সময়ের জন্য নির্ধারিত ওই এয়ার এম্বুলেন্স ব্যবস্থাটি পরিকল্পিতভাবে বন্ধ করার ব্যবস্থা করে সরকারের ঊর্ধ্বতন একটি পক্ষ।
খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটে দেশে ফেরানোর বিষয়টি একপ্রকার হত্যাচেষ্টা ছিল জানিয়ে জানিয়ে এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তারা ভালো করেই জানেন যে, নিয়মিত ফ্লাইটে দেশে ফেরার শারীরিক অবস্থা ম্যাডামের নেই এবং ফিরলেও তার শারীরিক জটিলতা সৃষ্টির সম্ভাবনা থেকে যায়। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় সম্পূর্ন অযৌক্তিক এবং তাকে হত্যার অপচেষ্টামূলক একটি সিদ্ধান্ত ছিল এটা। আমরা মনে করছি তারা ম্যাডামকে দেশে না ফেরাতে এবং রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে এই অপচেষ্টা চালিয়েছে।
সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের হস্তক্ষেপ ছাড়া খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়টি অনেকটা অনিশ্চিত ছিল, জানিয়ে এই যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, সেনাপ্রধানের হস্তক্ষেপের জন্য তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তার সহায়তা এবং মধ্যস্থতা ছাড়া হয়ত ম্যাডাম দেশে ফিরতে আরও দেরি হত কিংবা ফেরার সময়টা অনির্দিষ্ট ছিল। তিনি তার কাতার সফরকালীন সময়ে কাতারের আমিরের পক্ষ থেকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছেন।
শনিবার (৩ মে) সরকারি সফরে কাতারের উদ্দেশে রওনা হন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। জানা গেছে, সফরকালে সেনাপ্রধানের মধ্যস্থতায় বিএনপি চেয়ারপার্সনকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে একটি বিশেষ ফ্লাইট দিতে সম্মত হন কাতারের আমির।
মঙ্গলবার (৬ মে) কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, কাতারের রয়েল অ্যাম্বুলেন্সের ফ্লাইটেই দেশে ফিরছেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, বিশেষ এই ফ্লাইটে খালেদা জিয়ার সফর সঙ্গী হিসেবে থাকছেন তার দুই পুত্রবধূ বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। পাশাপাশি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কাতারের আমিরের একটি মেডিকেল টিমও থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সটি রওনা হবে। দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে স্থানীয় সময় ১টা ২৫ মিনিটে। যাত্রাবিরতি শেষে সেখান থেকে ২টা ৩০ মিনিটে রওনা হয়ে উড়োজাহাজটি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায়।
উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন যাবত লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি থেকে লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিলনে তিনি। সেখানে অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে চলে চিকিৎসা। চিকিৎসা শেষে তিনি এখন সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা।
২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে কয়েক দফা আবেদন করা হয়; কিন্তু তাতে সাড়া দেওয়া হয়নি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।