শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে লন্ডনে বিক্ষোভ মিছিল

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
ব্রিকলেন নিউজ-
গত বছর জুলাই আগস্টে বাংলাদেশে সরকার বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ সোমবার এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় এই প্রথম কোনো মামলার রায় হলো। অপর আসামি সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই রায়কে অবৈধ ও প্রহসনের বিচার দাবী করে লন্ডনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও এর কর্মী সমর্থকরা। গতকাল দুপুর ২ টায় লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে শত শত নেতাকর্মী সমবেত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সেখান থেকে দীর্ঘ মিছিল নিয়ে ব্রিকলেন এলাকা প্রদক্ষিন করে আবার আলতাব আলী পার্কে এসে সমবেত হন।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী  লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জালাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন রিয়াজের পরিচালনায়  বিক্ষোভ সমাবেশটি পরিচালিত হয়। যুক্তরাজ্যের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আসা সাবেক মন্ত্রী এমপি ও সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এসে যোগ দেন।
তাদের  সবার বক্তব্যেই উঠে আসে ,এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। এই আদালত অবৈধ । অধ্যাদেশ জারি করে দ্রুততম সময়ে সঠিক তদন্ত ছাড়া কোন এখতিয়ার ছাড়া  রাজনৈতিক  দুরভিসন্ধি বাস্তবায়ন করতে। দখলদার বাহিনী বাংলাদেশকে একটি জংগী রাষ্ট্রে পরিণত করতে । আওয়ামী লীগকে নিশ্চিন্ন করতে এই বিচার সম্পন্ন করেছে। বক্তারা এর নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য ,রায়ে বলা হয়, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। এ মামলাসংশ্লিষ্ট যাঁরা ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে নিহত হয়েছেন, তাঁদের কনসিডারেবল অ্যামাউন্ট (উল্লেখযোগ্য পরিমাণ) আন্দোলনকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি আহত আন্দোলনকারীদের আঘাতের মাত্রা ও ক্ষতি বিবেচনায় পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়, যাতে অনেকগুলো ঘটনা রয়েছে। মোটাদাগে পাঁচটি অভিযোগ হচ্ছে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় অপর অভিযোগের তিনটি ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনা হচ্ছে, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ সম্বোধন করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। একই দিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথন আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে তাঁদের ফাঁসি দেবে বলে উসকানি ও আদেশ দেন এবং অপরাধ সংঘটনে আসামিরা তাঁর অধীন ব্যক্তিদের কোনো বাধা প্রদান করেননি। ফলে রংপুরে আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। এই তিনটি ঘটনায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

প্রথম অভিযোগের অধীন তিনটি ঘটনায় শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, প্রথম ঘটনা হচ্ছে উসকানি, দ্বিতীয়টি হত্যা করার আদেশ, তৃতীয়টি হচ্ছে নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধে নিষ্ক্রিয়তা এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতা, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুসারে শাস্তযোগ্য। এই তিন ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

অভিযোগ উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়, অনেকগুলো ঘটনা আছে। একটি হচ্ছে আন্দোলনকারীদের হত্যা করতে ড্রোন, হেলিকপ্টার ও লেথাল উইপন ব্যবহারের আদেশ দিয়েছেন, যার মাধ্যমে তিনি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটন করেছেন।

শেখ হাসিনা একই ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছেন উল্লেখ করে রায়ে আরও বলা হয়, চারখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যা, যা সংঘটিত হয়েছে তাঁর আদেশের পরিপ্রক্ষিতে বলে বর্ণনায় এসেছে। একইভাবে অন্য একটি ঘটনায় তিনি একই অপরাধ করেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ। এ কারণে আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘এই তিনটি ঘটনায় তাঁকে (শেখ হাসিনা) একটি সাজা প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেটি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ডের সাজা।’

এ সময় আদালতকক্ষে উপস্থিত অনেকে হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তখন ডায়াসে দাঁড়িয়ে তাঁদের উদ্দেশে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আপনাদের অনুরোধ করছি আদালতের ডেকোরাম বজায় রাখার জন্য। আপনাদের উচ্ছ্বাস, প্রত্যাশা, প্রকাশভঙ্গি ট্রাইব্যুনাল কক্ষের বাইরে গিয়ে করলে সেটি আরও শোভনীয় দেখা যাবে।’

যে অভিযোগে আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড

রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসাদুজ্জামান খান কামাল মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ঢাকার চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনার জন্য। এ ঘটনার ক্ষেত্রে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে দায়ী সহযোগিতার জন্য এবং নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ ও প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য।

উভয় (চানখাঁরপুর ও আশুলিয়া) ক্ষেত্রে ছয়জন করে হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবব্যুনাল আইনের সংশ্লিষ্ট বিধানের অধীন আসাদুজ্জামান খান কামাল দায়ী বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, চানখাঁরপুল ও আশুলিয়ার ঘটনার ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটনে সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতা। এসব ঘটনায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ মামলার বিচারের ক্ষেত্রে তিনি অবদান রেখেছেন পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর জানা সম্পূর্ণটা ও সত্য প্রকাশের মাধ্যমে। এমনকি তিনি স্বীকার করেছেন এবং তিনি ৩৬ দিনের আন্দালনের সব ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁর অবদান, স্বীকার করার সঙ্গে বস্তুগত সাক্ষ্যপ্রমাণ বিবেচনায় তাঁর সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে, যেখানে অপরাধের সম্পৃক্ততায় সর্বোচ্চ শাস্তি। কিন্তু তাঁর অবদান বিবেচনায় নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাঁকে পাচ বছরের কারাদণ্ড প্রদানের।

রায়ের পর প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম প্রথম আলোকে বলেন, তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। পাঁচটি অভিযোগকে ছয়টি কাউন্টে (ঘটনা বা বিষয়) ভাগ করে দুটি অভিযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড এবং আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া যায়। অপরাধের নৃশংসতা, গুরুত্ব ও গভীরতা বিবেচনায় তিনটি কাউন্টে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর তিনটি কাউন্টে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুটি অভিযোগেই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি রাজসাক্ষী হয়েছেন, তিনি মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার যোগ্য, তবে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন এবং তাঁর দেওয়া সাক্ষ্য ট্রাইব্যুনালের সঠিক রায় বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করেছে—এসব দিক বিবেচনায়।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০