নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:
বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আলী রিয়াজ। কিন্তু সম্প্রতি এক নারী আইনজীবীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সফরে গিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি। এ সফরে সরকারি সুবিধা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন এবং সমালোচনার ঝড় তুলেছে। তবে এই অভিযোগ নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি বিতর্কিত মার্কিন নাগরিক আলী রিয়াজ।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ড. আলী রিয়াজ সম্প্রতি রাজধানীর আদাবরের বাসিন্দা একজন নারী আইনজীবীকে নিয়ে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে অবস্থিত শালবন রিসোর্টে যান। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে ওই রিসোর্টে যান আলী রিয়াজ।
একাধিক বিশ্লেষক বলছেন, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা একজন ব্যক্তির জন্য এটি অনুচিত এবং জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।
উল্লেখযোগ্য যে, ড. আলী রিয়াজ বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আমেরিকার ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর। আলী রিয়াজ আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের সভাপতিও। তবে তার মার্কিন নাগরিকত্ব এবং সংবিধান সংস্কারের মতো একটি অতিজনসংবেদনশীল ইস্যুতে নেতৃত্ব গ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। একইসঙ্গে তিনি সরকারঘোষিত ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন।একই সঙ্গে তিনি সরকারঘোষিত ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর সহসভাপতির পদেও রয়েছেন। তার মার্কিন নাগরিকত্ব এবং এমন একটি স্পর্শকাতর ও রাষ্ট্রীয় বিষয়ক নেতৃত্বে থাকা—এই দুটি নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক রয়েছে।
এই বিতর্ক আরও তীব্র হয় যখন তার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউপিডিএফ-এর সঙ্গে গোপনে বৈঠক করে। সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম এবং সহিংসতার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। বৈঠকে ড. রিয়াজ ছাড়াও কমিশনের আরও কয়েকজন সদস্য ও ইউপিডিএফ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। গতমাসে এক সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, “যাদের নিয়ে আলোচনা চলছে, তারা স্বঘোষিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনা করা উচিত হয়নি।”
এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে ড. রিয়াজের কর্মকাণ্ড ও কমিশনের ভূমিকা আরও বেশি নজরদারির আওতায় এসেছে।
জনগণের একটি বড় অংশ মনে করছেন, সংবিধান সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে থাকা একজন ব্যক্তির এ ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অগ্রহণযোগ্য। পাশাপাশি তার নীরবতা আরও সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “সংবিধান সংস্কারের মতো স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত কারো বিরুদ্ধে যখন এমন অভিযোগ ওঠে, তখন সেটি শুধু তার ব্যক্তি নয়—সমগ্র প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।”