মৌলবাদীদের চাপে দিশেহারা ইউনূস, বিদায় ঘণ্টা আসন্ন

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
অভিষেক জিকু
মৌলবাদীদের চাপে দিশেহারা শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মৌলবাদীরা তাকে পাঁচ মিনিটে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন প্রকাশ্যে। তাদের সাফ কথা, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালাবার জন্য ৪৫ মিনিট সময় পেলেও ড. ইউনূস ৫ মিনিটও সময় পাবেন না। নারী সংস্কার কমিশন ও কমিশনের সুপারিশ বাতিলের দাবিতে সুর চড়াচ্ছেন মৌলবাদীরা। এমনিতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে নারী স্বাধীনতা লাটে উঠেছে। হেফাজতে ইসলাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠন প্রকাশ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুমকি দিচ্ছে। বাংলাদেশ জামায়েত ইসলাম পিছন থেকে তাদের মদদ জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে শিগগিরই ড. ইউনূসের বিদায় ঘণ্টা বাজতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাতিল করে বাংলাদেশের নারীদের স্বাধীনতা হরণ করতে সচেষ্ট মৌলবাদীরা। তারা চায় বোরখা আড়ালে নারীদের বন্দি রাখতে। ইসলামিক অনুশাসনের নামে নারী অধিকার হরণ করতে চাইছে তারা। মৌলবাদীদের হাতে পুতুল ড. ইউনূসও তাই নীরব দর্শক। অবশ্য প্রতিবাদ করার ন্যূনতম ক্ষমতা তার নেই। তাই দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে নাক গলানোর বদলে বিদেশ ভ্রমণেই ব্যস্ত ড. ইউনূস।
হেফাজতের ইসলামের নেতা মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব ইতিমধ্যেই ড. ইউনূসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের দাবি না মানা হলে ঢাকা অচল হয়ে যাবে। আন্দোলনের মুখে হাসিনার বিদায় হয়েছে, আপনি ফুঁয়ের সঙ্গে বিদায় হয়ে যাবেন। দেশ অচল করে দেওয়া হবে, আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।’ তার দাবি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনটাকেই বাতিল করতে হবে। কারণ কমিশন সুপারিশ করেছিল, উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকার দিতে হবে। বহুবিবাহ প্রথা বন্ধেরও সুপারিশ করেছিল কমিশন। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। বিভিন্ন বিষয়ে নারী-পুরুষ সমান অধিকার দেওয়ার কথাও ছিল শিরীন পারভীন হকের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশে। কিন্তু সেই সুপারিশ ‘ইসলামবিরোধী’ বলে জামায়াতের ছাতার তলায় আশ্রিত বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠন হুংকার দিয়েছে। প্রবল চাপে রাখা হচ্ছে ড. ইউনূসের সরকারকে। শিরীন পারভিন হককেও আক্রমণের নিশানা করা হয়েছে।
হেফাজত ইসলামের নেতা মামুনুল হক অবশ্য ভীতি বা আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। তার দাবি, নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে ‘ইসলামবিরোধী’। তাই মুসলমান নারীদের মধ্যেও ‘আতঙ্ক তৈরি হয়েছে’। আসলে ইসলামি শাসনের নামে বাংলাদেশে নারীদের যাবতীয় অধিকার কেড়ে নিতে চায় তারা। নারীকে করে তুলতে চাইছে শুধুমাত্র ভোগ্যপণ্য। তাই বাড়ছে ধর্ষণ। নারীদের বাজার করার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। একাত্তরের মতোই ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারীদের অবস্থা আরও খারাপ। অথচ, ড. ইউনূসের সরকার নীরব দর্শক।
হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না’। তাই তার হুংকার, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, এনজিওবাদী গোষ্ঠীর প্ররোচনায় এমন কোনো হটকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না, যা কোরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে যায়। এক্ষেত্রে আমরা কোনো ছাড় দেব না’। হেফাজতে ইসলাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠন ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছেন নারীদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার কর্মসূচিতে। ইসলামের নামে তারা বাংলাদেশ শরিয়তের আইন চালু করতে চান। জামায়াতের ছত্রছায়ায় নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রথম থেকেই মৌলবাদীদের হাতের পুতুল। জামায়াত ইসলামের ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের হাত ধরে তাদের আত্মপ্রকাশ। তাই হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতেও তাদের অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে।
এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ হেফাজতের মঞ্চ থেকে বলেছেন, ‘আমার ভাই আবরার, আবু সাঈদের রক্তের ওপর পাড়া দিয়ে এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ আসবে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে সবচেয়ে বড় সংস্কার। এখানে যদি, কিন্তু, আচ্ছা, দেখি নেই। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতেই হবে।’ তারা জানিয়ে দিয়েছে, পূর্ণ সংস্কার না হলে নির্বাচন করা চলবে না। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমানও জানিয়ে দিয়েছেন নারী সংস্কারই শুধু নয়, বাংলাদেশে ইসলামি শাসন কায়েম করতে হবে। নতুবা বিদায় নিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। গোটা বাংলাদেশকে অবরুদ্ধ করারও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
মৌলবাদীদের দাপটে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এখন অনেকটাই কোনঠাসা। তাদেরকেও হজম করতে হচ্ছে একাধিক হুমকি। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়েও জটিলতা কাটেনি। এই অবস্থায় নারী সংস্কার কমিশনকে বাতিলের দাবি তুলে ড. ইউনূসকে নিজেদের হাতের পুতুল হিসাবেই ধরে রাখতে চায় মৌলবাদীরা। ড. ইউনূসও তাই নিজের গদি বাঁচাতে মৌলবাদীদের দাবিকেই সায় দিয়ে চলেছেন। কিন্তু কতোদিন তার গদি বাঁচবে সেটাই বড় প্রশ্ন। সবকিছুতেই বিরোধ এখন প্রকট। দেশের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। মানুষ সর্বত্র নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। দাপট দেখাচ্ছে জেলমুক্ত জঙ্গিরা। পুলিশ বাহিনীটাই নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে।
মানুষ চাইছেন নির্বাচিত সরকার। কিন্তু নির্বাচন নিয়েও রয়েছে ব্যাপক মতোভেধ। এনসিপির সাফ কথা, সংস্কার আগে হবে, পরে নির্বাচন। তবে সেটা মানতে নারাজ বিএনপি। দুই মাসের মধ্যে হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যাবতীয় মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি উঠেছে। সবমিলিয়ে আরও জটিল পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় বলে মন্তব্য করেছে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। তবে এ সময়ে সম্ভব না হলে নির্বাচনের জন্য এপ্রিল মাস পার হওয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। তার সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়ে এনসিপির সাফ কথা, আগে পূর্ণ সংস্কার। তারপর ভোট। কিন্তু নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ মানা চলবে না।
নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিকে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী বলে মনে করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্ক্সবাদী)। দলটির প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানার মতে, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। নারীরাও সেটাই চাইছেন। কিন্তু মৌলবাদীদের দাপটে সেই দাবি আজ উপেক্ষিত। কারণ ড. ইউনূস ব্যস্ত নিজের গদি বাঁচাতে। কিন্তু হুমকির বহর যে হারে বাড়ছে তাতে তার গদি কতোদিন টিকবে সেটাই প্রশ্ন। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ড. ইউনূসকে সতর্ক করে বলেন, ‘চব্বিশের জুলাইয়ের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর আমি বলতে চাই, আমরা দিল্লির দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছি, নিউইউর্কের গোলামি করার জন্য নয়’।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১