অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মব শাসন জারি রাখতে কনক, পিনাকী ও ইলিয়াসের মধ্যরাতের গুজবযন্ত্র

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

মধ্যরাত হলেই দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হয় একটি সংঘবদ্ধ প্রোপাগান্ডা চক্র। তাদের স্ট্যাটাসে অস্থিরতা তৈরি হয় বাংলাদেশে। এই চক্রের নেতৃত্বে আছেন কনক সারওয়ার, পিনাকী ভট্টাচার্য ও ইলিয়াস হোসেন—তিনজনই বিদেশে অবস্থানরত ও বিতর্কিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত।
তাদের ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে রাত গভীর হলেই শুরু হয় রাষ্ট্রবিরোধী গুজব, প্ররোচনা এবং বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা। আর এই বিভ্রান্তিকে চূড়ান্ত রূপ দিতে বসে থাকে সুযোগ সন্ধানী একদল মানুষ। যারা এসব স্ট্যাটাস শেয়ার দিয়ে খেপিয়ে তোলে মানুষকে। আর এরপর থেকে শুরু হয় মব। ওইদিকে সরকারও থাকে নির্বিকার। ভাঙচুর-সংঘাতের পর নাম মাত্র বিবৃতি দিয়ে পার পেয়ে যায় তারা। এটি এখন বাংলাদেশের চিত্র।

সূত্র জানায়, এই গোষ্ঠী তিনটি মূল কৌশলে বিভ্রান্তি ছড়ায়:
সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সন্দেহের আওতায় আনা
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনিক কাঠামোর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক আক্রমণ
গুজব-নির্ভর ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিরতার মিথ্যা প্রেক্ষাপট তৈরি করা

উদাহরণস্বরূপ, কনক সারওয়ার সম্প্রতি তার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন:
“সেনাপ্রধানের বাসায় এই মুহূর্তে জরুরি মিটিং হচ্ছে। প্রায় ৪০টি গাড়িতে এসেছেন জেনারেল, ব্রিগেডিয়ার এবং কর্নেল মহোদয়গণ! কি কথা তাহার সাথে মধ্যরাতে? দেশ রক্ষা না ভক্ষণ…?!”https://www.facebook.com/drkanaksarwarbd/posts/pfbid02sx8m8hHMSfy5tYXFP91XBjq6Bs2nATfQAAzjff7vMSinjK7bbLafKX1NhN2eLndXl
এই ধরনের বক্তব্যের পেছনে কোনো প্রমাণ নেই। কয়েকটি গাড়িয়ে দেখিয়েই তিনি এ দাবি করেছেন। ছবিটি কখন তোলা তারও উল্লেখ নেই। তবুও, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বাহিনীকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সন্দেহের মধ্যে ফেলতে এটি কাজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দারুণভাবে কাজ করেছে।

ইলিয়াস হোসেন, যিনি অতীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক এবং বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের জন্য সমালোচিত হয়েছেন, তিনি ফেসবুকে লিখেছেন: “নুশরাত আপা যে থাইল্যান্ড যাবার জন্যে হামিদ কাকার কাছ থেকে অ্যাডভান্স নিয়েছে সেটা ফেরত দেবে কেডা?” (https://www.facebook.com/eyeeliashossain/posts/pfbid03Co5B3rCKDYookhTvubmY9gLchUcsZPvHiHBSravLr9bNgZK3Yb63vk4UYrgA1q6l)

এই মন্তব্যে কোনো প্রমাণ নেই, নেই নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রও। কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল একজন রাজনীতিককে বিতর্কে জড়ানো এবং চরিত্রহননের মাধ্যমে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করা।
পিনাকী ভট্টাচার্য, যিনি প্রায়শই ‘গোপন’ তথ্য ফাঁস করার নামে গুজব ছড়ান, লিখেছেন:
“উত্তরপাড়ায় কোন গেঞ্জাম হইতেছে না। বরং ওখানকার আওয়ামি অনুরাগী নেতৃত্ব তাঁদের সমস্ত আশংকা, ভুলভ্রান্তি ও সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে জুলাই বিপ্লবের সতীর্থ হওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।”(https://www.facebook.com/PinakiRightsActivist/posts/pfbid0pVWvPcjXTiwDxdZu1jBAsKiWSs16LAyALV6KSQgTEJJCe1HRXfNYzcwFtgHGYPPkl)
এই বক্তব্য স্পষ্টতই উত্তেজনাপূর্ণ এবং সরকার বিরোধী ‘বিপ্লব’ বা ‘অভ্যুত্থান’-এর ইঙ্গিত দেয়।
গভীরতর উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা
গোপন সূত্র এবং পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জানা গেছে, এই প্রচারণাগুলোর পেছনে সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ও কৌশলগত লক্ষ্য রয়েছে। মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে: ন্যাশনালিস্ট সিটিজেনস প্ল্যাটফর্ম (এনসিপি) এবং বৈষম্যবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে রাতারাতি রাস্তায় নামানো। জামায়াত-শিবির ও তাদের নেটওয়ার্ককে সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা।রাষ্ট্রপতি ও বঙ্গভবনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা।জনগণের মধ্যে ‘আগামীকাল কিছু হতে পারে’ ধরনের মিথ্যা উত্তেজনা তৈরি করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গুজবের মাধ্যমে এমন একটি সাইকোলজিক্যাল ফ্রেম তৈরি করা হয়, যেন কোনো হঠাৎ ঘটনা ঘটলে জনগণ সেটিকে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে গ্রহণ করে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রচার অভিযানে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের (Chief Advisor’s Office) সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও সরাসরি কোনো প্রমাণ এখনো সামনে আসেনি, তবে কিছু গোপন কূটনৈতিক উৎস ইঙ্গিত দিয়েছে যে এই দপ্তরের কিছু অংশ এই প্রচারণাকে ‘নীরব সহায়তা’ দিচ্ছে।

বিভ্রান্তিকর এই প্রচারণার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল সময়গুলোতে এই প্রোপাগান্ডাগুলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি করে

বিশ্লেষকদের মতে,এটি শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, বরং একটি সুনির্দিষ্ট রাষ্ট্রদ্রোহমূলক প্রচেষ্টা, যেখানে সামাজিক বিভ্রান্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্রকে পঙ্গু করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”

যখন রাত গভীর হয়, তখন কেবল শহর বা গ্রাম নয়—গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যায় তথ্যের সত্যতাও। সেই অন্ধকারেই জন্ম নেয় ‘মধ্যরাতের গুজবযন্ত্র’। কনক সারওয়ার, পিনাকী ভট্টাচার্য ও ইলিয়াস হোসেনের মতো ব্যক্তিরা সেই অন্ধকারে আলোর নামে ছড়াচ্ছেন বিভ্রান্তি।
রাষ্ট্র ও সমাজকে রক্ষার স্বার্থে এখনই এই চক্রের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময়। না হলে গুজব ও বিভ্রান্তির এই কালো ছায়া একদিন গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও জাতীয় নিরাপত্তাকে গিলে ফেলতে পারে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১