অনলাইন ডেস্ক-
বর্তমান সরকারকে উৎখাত বা পতন করার জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সার্জিস আলম ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। গত ১৮ জুলাই রাত ১০টার সময় নাহিদ ইসলাম এবং সার্জিস আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে এবং ম্যাসেজে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারসহ এ বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়।
সেতু ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বনানী থানায় করা মামলায় এক প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া এ তথ্য উল্লেখ করেছেন।
এদিন পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ভিপি নুরকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়েছে, আসামি ভিপি নুরকে আদালতের নির্দেশনা মেনে ব্যাপক ও নিবিড়ভাবে মামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদকালে আসামি জানায় গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে কোটা সংক্রান্তে আদালতের রায়ের পর থেকেই সে তার ঘনিষ্ঠ নাহিদ ইসলাম, নাসানাত আব্দুল্লাহ, সার্জিস আলম, আসিব মাহমুদ, আক্তার হোসেন এবং আহনাফদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। পরে ১৮ জুলাই রাত ১০টায় নাহিদ ইসলাম এবং সার্জিস আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে এবং ম্যাসেজে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার এবং বর্তমান সরকারকে উৎখাত বা পতন করার জন্য তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। তখন নাহিদ ইসলাম ও সার্জিস আলম দাবি-দাওয়াগুলো ম্যাসেজ করে লিখে দিতে বললে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, ইন্টারনেট সচল করা, ছাত্রলীগ/যুবলীগে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা, স্বরাষ্টমন্ত্রীর পদত্যাগসহ সরকারের পদত্যাগ ইত্যাদি দাবি-দাওয়া লিখে দেয় ভিপি নুর। ১৯ জুলাই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য সে তাদের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানায় এবং বর্তমান সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে অন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানায়।
আসামি মামলার ঘটনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে, যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এর আগে গত ২০ জুলাই বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কেয়ার টেকার মো. রবিউল ইসলাম বাদি হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করেন। এ মামলার পর ভিপি নুরকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। গত ২১ জুলাই এ মামলায় আদালতে তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৮ জুলাই সকাল ৯ টায় সেতু ভবনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যথারীতি অফিসের কার্যক্রম করতে থাকে। বিকেল ৪ টায় অজ্ঞাতনামা ২৫০/৩০০ জন আসামি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঠা ও ইটপাটকেল নিয়ে সেতু ভবনের সামনে এসে বিভিন্ন সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। পরে আসামিরা সেতু ভবনের সচিবসহ কর্মকর্তাদের পদ পদবী উল্লেখ খোজাখুজি করতে থাকে। তখন তারা হুমকি ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে সেতু ভবন লক্ষ্য্ করে এলাপাথারী ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এক পর্যায়ে আসামিরা সেতু ভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশে করে। ভবনের নিচ তলায় রাখা জীপ, কার, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেল, নিরাপত্তা ভবন, সিসি ক্যামেরা, পার্কিং শেড, ক্যান্টিন, গাড়িচালকের কক্ষ, আনসার শেড, মুজিব কর্নার, জেনারেটর কক্ষসহ মূল ভবন ভাংচুর করে এবং অগ্নিসংযোগ ঘটায়। পরে আসামিদেরকে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে সরে আসতে অনুরোধ করলে তারা হত্যার উদ্দেশ্যে সেতু ভবনের সিনিয়র সচিব, অন্যান্য অফিস স্টাফ ও নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর করে সাধারণ ও গুরুতর জখম করে। পরবর্তীতে আসামিরা নিচ তলার আনসার শেড, ড্রাইভার শেড থেকে চেয়ার টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র এবং সেতু ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে নিচ তলা থেকে ১১ তলা পর্যন্ত ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। অফিসের রাখা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফাইল কেবিনেট, এসি, ফ্যান, পানির ফিন্টার, চেয়ার টেবিল, আসবাবপত্রসহ সরকারি ও ব্যক্তিগত মালামাল সামগ্রী চুরি করে এবং প্রত্যেক ফ্লোরে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। ভবনের নিচ তলা থেকে ১২ তলা পর্যন্ত ফ্লোরে রাখা সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রীর দপ্তর, সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, পদ্মা সেতু প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুলেন সড়ক টানেল প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সেতু বিভাগের আওতাধীন সকল প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি, এফডিআর ইনস্ট্রুমেন্ট, টেন্ডার সিকিউরিটি ডকুমেন্টস, ইন্টারনেট সার্ভার, শতাধিক কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রীসহ যাবতীয় নথিপত্র আগুনে পড়ে গেছে।
এছাড়া সেতু ভবনের পার্কিংয়ে থাকা ৩২ টি জীপ, ৯ টি পিকআপ, সাতটি মাইক্রোবাস, একটি মিনিবাস, পাঁচটি মোটরসাইকেল ও একটি আম্বুলেন্স আগুনে পুড়ে ভম্মীভূত হয়।