সবার জন্য পেনশন, প্রবাসীরা ও পাচ্ছেন সুযোগ

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

ব্রিকলেন ডেস্ক:

সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান, বেকারত্ব, ব্যাধি, পঙ্গুত্ব বা বার্ধক্যজনিত কারণে নাগরিকদের সরকারি সাহায্য দেয়া, বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। সীমিত পরিসরে বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন।

এর আগে ১৩ আগস্ট এ সংক্রান্ত বিধিমালা জারির মাধ্যমে এটি চালু করা হয়। দেশে বেসরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের আওতায় আনার কোনো উদ্যোগ এটাই প্রথম। যে বিপুল জনগোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে আইনটি করা হয়েছে, সেটা বাস্তবায়িত হলে এটাই হবে দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক ফান্ড। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে আট কোটি। এরমধ্যে সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন ১৪ লাখের কিছু বেশি। সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হলে প্রায় আট কোটি ৩৫ লাখ মানুষ এই ব্যবস্থার আওতায় আসবে।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে সবার জন্য পেনশন চালু করার অঙ্গীকার ছিল। গতবছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের জন্য সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর তাগিদ দেন। এরপর গত বছরের ২৯ অগাস্ট এই বিষয়ে বিল সংসদে তোলে সরকার। চার শ্রেণির ব্যক্তিরা এই পেনশন কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন। তারা হলেন- প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি চাকরিজীবী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী ও অসচ্ছল ব্যক্তিরা। চারটি স্কিমের মধ্যে রয়েছে-

প্রবাস স্কিম: বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক তফসিলে বর্ণিত চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় দিয়ে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন এবং তিনি দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করতে পারবেন। প্রয়োজনে, স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে, পেনশন স্কিনের মেয়াদপূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় পেনশন পাবেন।

প্রগতি স্কিম: বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর্মচারীদের জন্য এ স্কিমে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মচারী এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দেবে। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ স্কিমে অংশ না নিলে, ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

সুরক্ষা স্কিম: অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যেমন- কৃষক, রিকশাচালক

শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতী, ইত্যাদি তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

সমতা স্কিম: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক, সময়, প্রকাশিত আয়সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী ব্যক্তিরা (যার বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা) তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

মাসিক সর্বনিম্ন-সর্বোচ্চ চাঁদা কত
এ কর্মসূচির আওতায় ১৮ থেকে ৫০ ঊর্ধ্ব বয়সীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা থাকবে। মাসিক চাঁদা হতে পারে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা আর সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে কর্মসূচি পরিবর্তন এবং চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ থাকছে। পেনশন ব্যবস্থায় নগদ টাকায় কোনো লেনদেন হবে না। সব কর্মকাণ্ড হবে অনলাইনে। সেক্ষেত্রে বিকাশ, নগদ ছাড়া অন্যান্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ব্যবহার করে চাঁদা দেয়া যাবে।

নিববন্ধন করবেন যেভাবে
প্রতিটি স্কিমের বিপরীতে নির্ধারিত পরিমাণ চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে মাসিক পেনশনের প্রাপ্যতা অর্জিত হবে। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী (এনআইডি) সব নাগরিক পেনশন স্কিমে নিবন্ধিত হতে পারবেন। অবশ্য বিশেষ বিবেচনায় ৫০ ঊর্ধ্ব নাগরিকও এ স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন এক বছর চাঁদা প্রদান শেষে যে বয়সে উপনীত হবেন, তার থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। এক্ষেত্রে চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর হওয়া পর্যন্ত চাঁদা প্রদান করবেন। এরপর থেকে নির্ধারিত হারে পেনশন পাবেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি না থাকলে পাসপোর্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন, তবে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এনআইডি গ্রহণ করে জমা দিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরা কর্মসূচির ‍সুবিধা সমর্পণ সাপেক্ষে পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারীকে অনলাইনে নিবন্ধন হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেককে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেয়া হবে।

চাঁদা দিতে হবে যেভাবে
অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ক্রেডিট কার্ড/ডেবিট কার্ড বা তফসিলি ব্যাংকে চাঁদা জমা দেয়া যাবে। জরিমানা ছাড়া পরবর্তী একমাসের মধ্যে চাঁদা দেয়া যাবে। তবে এর বেশি সময় অতিবাহিত হলে প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ বিলম্ব ফি গুনতে হবে। পর পর তিন মাস চাঁদা জমাদানে ব্যর্থ হলে পেনশন হিসাব স্থগিত হবে। সব বকেয়া পরিশোধ না হলে তা সচল হবে না। কোনও প্রতিষ্ঠান স্কিমে অংশগ্রহণ করলে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ধার্যকৃত চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একত্রে তহবিলে জমা দিতে হবে। কিস্তিদাতা পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক হারে চাঁদা দিতে পারবেন। চাঁদা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য রেজিস্টার্ড মোবাইলে এসএমএস করে জানিয়ে দেয়া হবে। কোনো চাঁদাদাতা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসমর্থের কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মহীন ও উপার্জনে অসমর্থ হলে কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীন বা নিখোঁজ হলে, যেসব বিধান কার্যকর হবে সেটাও উল্লেখ রয়েছে বিধিমালায়।

তহবিলে জমাকৃত অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলা যাবে
চাঁদাদাতা নিজের এবং পরিবারের প্রয়োজনে চিকিৎসা, গৃহনির্মাণ, গৃহ মেরামত এবং সন্তানদের বিয়ের জন্য তহবিলে জমাকৃত অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন। তা নির্ধারিত ফিসহ সর্বোচ্চ ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে, যা তার হিসাবে জমা হবে। একটি ঋণ চলমান থাকতে নতুন করে ঋণ নেয়া যাবে না।

চাঁদাদাতা মারা গেলে কারা পাবেন পেনশন
কোনো স্কিমের চাঁদাদাতা পেনশনে থাকাকালে তার বয়স ৭৫ বছর ‍পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে, তার নমিনি বা উত্তরাধিকারীরা ৭৫ বছর হওয়া পর্যন্ত অবশিষ্ট মাসের জন্য মাসিক পেনশন পাবেন। কোনো চাঁদাদাতা মাসিক পেনশন প্রাপ্যতা অর্জিত হওয়ার আগে মারা গেলে, তার নমিনি বা অবর্তমানে উত্তরাধিকারী মুনাফাসহ জমাকৃত অর্থ ফেরত পাবেন।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০