প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর দীর্ঘকাল ধরে ঘটে যাওয়া নির্যাতন, নিপীড়নের প্রতিবাদ ও সংহতি জানাতে বৃটেনে বসবাসরত হিন্দুদের প্রথম বারের মতো *হিন্দু সম্মেলন -২০২৫* অনুষ্টিত হয়েছে। শনিবার (১০ই মে ২০২৫), লন্ডনের বার্কিংয়ের রিপল সেন্টারে অনুষ্টিত হয় এই সম্মেলন। সময়ের প্রয়োজনে আয়োজিত এই সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের সাংসদ, গ্রেটার লন্ডন এসেমব্লীর সদস্য , বিভিন্ন কাউন্সিলের মেয়র , কাউন্সেলর, বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সমাজ কর্মীগন অংশ গ্রহন করেন।

বৃটেন ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়ে নিজ নিজ দেশের প্রতি সম্মান প্রদর্শনান্তে সর্বজন শ্রদ্ধেয় শ্রী গৌরপদ দেবের গীতা পাঠ ও উপস্থিত অতিথিদের অভিনন্দন জানানোর পর প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সভাটি শুরু হয়। সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটির সর্বজেষ্ঠ সদস্য বিশিষ্ট চিকিৎসক ড. সুনীল রায় তার উদ্বোধনী বক্তব্যে সংগঠনের আদর্শ, উদ্দেশ্য, বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী হিন্দুদের উপর নির্যাতনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন। নীরবে সয়ে যাওয়া দীর্ঘকালব্যাপী নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদে সকলকে জেগে উঠার আহ্বান জানান তিঁনি। উপস্থিত সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দকে একাজে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
বার্কিং ও ডেগেনহ্যামের সাংসদ মিস মার্গারেট মুলেন তাঁর বক্তব্যে নিজ এলাকার হিন্দুদের অধিকার ও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করে আসার কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের রাজনীতির অস্থিতিশীলতার কারনে হিন্দুদের মানবাধিকার লঙ্ঘনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন । হিন্দুসহ সকল নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।
ইলফোর্ড সাউথের সাংসদ মি. জাস আতোয়াল তাঁর বক্তব্যে বৃটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশের হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে বক্তব্য রাখার কথা উল্লেখ করেন। তিঁনি বৃটিশ পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড লামিকে এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানান। আগামী দিনগুলোতে হিন্দুদের অধিকার আদায়ে যেকোন সময় হিন্দুদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
গ্রেটার লন্ডন এসেম্বলীর সদস্য মি.উমেশ দেশাই বাংলাদেশের হিন্দুদের মানবাধিকার লংঘন ও নানা রকম নিপীড়নে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিঁনি বাংলাদেশ সরকারকে হিন্দু ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার , জীবনের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য জোর দাবী জানান। হিন্দুদের যেকোনও সংগ্রামে পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
বার্কিং ও ডেগেনহ্যাম কাউন্সিলের মেয়র মি. মঈন কাদরী বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর নির্যাতনে শঙ্কা প্রকাশ করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতায় হতাশা ব্যক্ত করেন। তিঁনি নিজে একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে সংখ্যালঘুদের উপর বিরাজমান নিপীড়ন নির্যাতনের ঘটনাকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যায়িত করেন। নিজের কাউন্সিল এলাকায় হিন্দুদের সাথে অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তাদের যে কোনও সমস্যায় পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।
সভায় কাউন্সিলরগন, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের চলমান ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেন। এই আয়োজনে বাংলাদেশের বিরাজমান নিপীড়ন নির্যাতনের ঘটনা সমূহের বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য আয়োজকদের সাধুবাদ ও প্রসংশা জানান। আগামী দিনে যে কোনও সংগ্রামে পাশে থাকার কথা বলেন।
উল্লেখ্য , অনুষ্ঠানের প্রথম ভাগে বাংলাদেশের হিন্দুদের মানবাধিকার লংঘন, ধর্ষন, লুটপাট , অগ্নিসংযোগ , ভূমি দখল , দেশত্যাগে বাধ্যকরন ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ ইত্যাদি ঘটনার উপর ১৯৪৭ সন থেকে ২০২৫ সন পর্যন্ত সহিংসতার একটি সচিত্র প্রতিবেদন স্লাইডের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। প্রতিবেদনে দৃশ্যমান কিছু সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনা উপস্থিত দর্শকদেরকে ভীষনভাবে আবেগাপ্লুত করে তোলে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের জন্য একটি উম্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন মি. হারাধন ভৌমিক , মি. সমীর দাস এবং মি. বিক্রম বানার্জী। তারা দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে সকল সাংসদ, মেয়র, কাউন্সিলর ও সামাজিক নেতৃবৃন্দকে উত্তরীয় পড়িয়ে সম্মানিত করা হয়।
প্রথম বারের মত বৃটেনের মাটিতে হিন্দুদের এই সম্মেলন আয়োজনে সংগঠনের বেশ কিছু নেতৃবৃন্দ অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তাদের মধ্যে শ্রী গৌরপদ দেব, ড. সুনীল রায়, হারাধন ভৌমিক , অমিতোষ মজুমদার , বিশ্বজিত বল, স্বরূপ শ্যাম চৌধুরী , শিপন বর্মন, সুরঞ্জিত গুপ্ত, গৌতম সাহা এবং সঞ্জিত দাসের নাম উল্লেখযোগ্য।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে , এই কনফারেন্স আয়োজনে স্টিয়ারিং কমিটি এবং সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে স্টীয়ারিং কমিটির সদস্য মি.গৌতম সাহা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।