বিএনপির বর্তমান ও সাবেক ১২৫ নেতার নেতৃত্বে গঠিত ‘স্বতন্ত্র গণতন্ত্র মঞ্চ’ আসন্ন ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মালিবাগ এলাকার স্কাই সিটি হোটেল লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার আহসান হাবিব। এর আগে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি টাঙ্গাইল-৫ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার এ কে এম ফখরুল ইসলাম, তিনি ঝালকাঠি-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ২০০১-০৪ মেয়াদের সাবেক ট্রাস্টি স্বপন সরকার, তিনি রাজবাড়ী-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাবেক সহসভাপতি টাঙ্গাইল সাদত কলেজের সাবেক ভিপি মনিরুল ইসলাম মিন্টু, তিনি টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানান।
লিখিত বক্তব্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি জানালেও পরবর্তীতে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আহসান হাবিব বিএনপি’র মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তির দাবি জানান।
এ ছাড়া বিএনপি’র অন্যতম নেতা হয়েও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা সংগঠনটির শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো বিষয় আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রে এমন কোনো দিকনির্দেশনা আছে বলে আমার জানা নেই। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও কোনো নিবন্ধিত দল বা জোটের সঙ্গে তারা অংশীদার হবেন না বলেও জানিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে বলেন, সংসদীয় নির্বাচন গনতন্ত্র সুরক্ষার একটি উপাদান। বাংলাদেশের সংবিধানের বাধ্যবাধকতায় প্রতি ৫ বছর পরপর সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান করেন। ১১তম সংসদের মেয়াদ ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ সালে সমাপ্ত হবে। সংবিধানের বিধান অনুসারে, ২৯ জানুয়ারির পূর্বেই ১২তম সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতেই হবে। তা না হলে সংবিধান ভঙ্গের অভিযোগ উত্থাপিত হবে। ক্ষমতার পরিবর্তন একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্ভব, অন্য কোনো উপায় সংবিধানে লিপিবদ্ধ নাই।
বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকমের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সংসদ নির্বাচন করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব উপেক্ষা করার কোনো উপায় নেই।
বর্তমান সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে ১২তম সংসদীয় নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচন বর্জন একটি দলের অধিকার হতে পারে না, তবে নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য আন্দোলনের ডাক দেওয়া অনৈতিক এবং সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করার শামিল। কারণ নির্বাচন প্রতিহত করতে যে শক্তির প্রয়োজন তাতে ধ্বংসাত্মক দিক ফুটে উঠে যেমন; মৃত্যু, সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, শিক্ষার কার্যক্রম ব্যাহত করাসহ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়া কিছুই নাই।
পরিস্থিতি যেরকম হোক না কেন নির্বাচন প্রতিহত করার কোনো আন্দোলনের ডাক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অন্তরায়। আমরা মনে করি, ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে পড়ে।
নির্বাচন কমিশন আমরা জানি স্বাধীন। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে না পারলে একদিন না একদিন জনতার কাঠগড়ায় আপনাদের দাঁড়াতে হবে এবং সেদিন জনতার আদালতেই আপনাদের বিচার হবে।
বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি নির্মম আচরণের কারণে আমাদের অন্তরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। জাতিসংঘ বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দিতে বর্তমান সরকারকে অনুরোধ করেছে এবং সেই সাথে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি। আমরা মনে করি, বর্তমান সরকার তা বিবেচনা করবে। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নতর চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। চিকিৎসা করার অধিকার প্রতিটি মানুষের আছে। এই পরিস্থিতিতে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দুর্বল বা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে দেওয়া যাবে না। সেজন্য জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনোনীত করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সমুচিত, তাতে করে সুষ্ঠু নির্বাচনে অনেক যোগ্য প্রার্থী ক্ষমতাসীনদের পরাজিত করে সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে এবং একটি প্রাণবন্ত সংসদ জাতি ফিরে পাবে।