নাজরাতুন নাঈম –
আসলেই কখন কাকে কি প্রশ্ন করব, কি নিয়ে কার সাথে আলোচনা করব তা যেন আমরা জানি না। বিয়ে বাড়ীর ডিনার টেবিলে কয়েকজন মহিলা বসেছি । একজন মহিলার স্বামী ছয়মাস আগে মারা গিয়েছেন । উনি বললেন বিয়ে বাড়ী আসার ইচ্ছে হচ্ছিল না কিন্তু উনার ছেলে জোর করে তাকে নিয়ে এসেছে , ছেলে বলছে এভাবে কোথাও না গিয়ে সারাদিন ঘরে বসে থাকলে বিষন্নতা রোগ পেয়ে বসবে । ছেলে তাকে খুব অনুরোধ করছে দেখে তিনি এসেছেন তার এক ভাইঝির বিয়েতে । আমরা বিয়ে বাড়ীর ডেকোরেশন , শাড়ীর ডিজাইন এসব নিয়ে আলাপ করছিলাম ।
হঠাৎ উনার পরিচিত এক মহিলা এসে উনার পাশে রাখা চেয়ারে বসলেন । এসেই উনাকে বিভিন্ন কষ্টদায়ক প্রশ্নে জর্জরিত করতে লাগলেন । সকল প্রশ্ন উনার মৃত স্বামীকে ঘিরে । মহিলা চাচ্ছেন এসব প্রশ্ন না শুনতে কিন্তু আগন্তুক মহিলা নাছোড়বান্দা ।
কতদিন তার স্বামী হসপিটেলে ছিলেন , স্বামী ছাড়া কেমন যাচ্ছে সময় এসব বলে আহত করছেন তার মনকে । মহিলা বার বার বলছেন “সবসময় , সবজায়গায় স্বামী নিয়ে কেউ কথা বললে আমি কষ্ট পাই , সব স্মৃতি মনে পড়ে আর এই কারণে বিয়ে বাড়ী বা গেট টুগেদার পার্টিতে যাই না।” কিন্তু তারপরও ঐ মহিলা তার মৃত স্বামী নিয়ে কথা বলতেই আছেন ।
আগন্তুক মহিলার কমনসেন্স নেই যে একজন সদ্য স্বামী বিয়োগে কাতর বিধবা নারী বিয়ে বাড়িতে এসেছেন একটু রিলাক্সের জন্য , সামাজিক যোগাযোগের জন্য ।তার সাথে অন্য বিষয় নিয়ে তো কথা বলে আড্ডা দেয়া যায় । আশেপাশে থাকা মানুষদের দায়িত্ব তার মন প্রফুল্ল করা।
আমাদের পরিচিত অনেক মানুষ এরকম রয়েছেন , কোন বিষয়ে অতিরিক্ত প্রশ্ন না করা আর কোন বিষয়ে কথা বলা উচিত, এসব বিষয়ে মোটেও বিবেচনায় আনেন নি।
আরেকটি বিয়ে বাড়ীর গল্প বলি ।আমার পাশে এক মহিলা বসেছেন ,তিনি গলায় কানে এত ভারী গয়না পরে এসেছেন মনে হচ্ছে উনার বিয়ে । আমাকে বললেন থাকেন কোথায় , বললাম , এরপর বললেন নিজের ঘর না কাউন্সিলের ঘরে থাকেন । আমি তো অবাক । অপরিচিত মহিলার একি প্রশ্ন । আমার ঘর যেমনই হোক উনার কি? যাই হোক উত্তর দিলাম । এরপর বললেন আপনার বয়স কত । বিব্রত হলাম তারপরও বললাম । তো বললেন আমার বয়স ও তো আপনার সমান , তা আপনাকে আমার চেয়ে দেখতে ছোট লাগছে কেন । বললাম সাজগোজ করে এসেছি , তাই হয়তোবা , বললেন আমিও তো মেইকাপ করে এসেছি । বললাম আমার ফাউন্ডেশন মনে হয় হাইব্রেন্ডের । মহিলা যেন অপমানিত বোধ করলেন । আগন্তুক কোন মহিলা যখন অপরিচিত কাউকে এমন অপ্রাসংগিক , অবান্তর প্রশ্ন করেন তখন এত অসহ্য লাগে যা বলার নয় ।